রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, বরাদ্দে কঠোর সরকার
২৭ জুন ২০১৯ ১০:০৯
ঢাকা: অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবতে বসা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি মেটাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। মুলধন ঘাটতি মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার কোটি টাকা চাইলেও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে মাত্র দুইশ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি অংশ টিকিয়ে রাখার জন্য এই টাকা দেওয়া হবে। তাছাড়া চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা রাখা আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জনগণের কাছ থেকে আদায় করা করের টাকা প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের চেয়ে অবনতি দৃশ্যমান। বিশেষ করে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের অবস্থা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় খারাপ হয়েছে। এই অবস্থায় এসব ব্যাংকে মুলধনের ঘাটতি মেটাতে টাকা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটি চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা জনতা ব্যাংক চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার চার হাজার কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরও এক কোটি ১২ লাখ টাকা।
ওই কর্মকর্তা জানান, বাজেটে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো চেয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে তার একটি খসড়া এরইমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে তৈরি করা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেওয়ার কথা ৮৪৯ কোটি টাকা। জনতা ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ৫০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাবে ৫০০ কোটি টাকা। তবে, এ টাকা দেওয়া না দেওয়ার ইচ্ছা সম্পূর্ণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের সিনিয়র এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোকে কোনো অর্থ দিতে আমরা একেবারেই রাজি নই। অতীতে এ ব্যাংকগুলোকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে কারণে অর্থ দেওয়া হয়েছিল তা কোনো কাজে আসেনি। তাই, এবার আমরা এখাতে কোনো অর্থ দিতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মাত্র দুটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওপর থেকে কোনো নির্দেশনা যদি না আসে তবে এ অর্থ চলতি সপ্তাহেই ছাড় করা হতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। এ ব্যাংককে মোট দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এইচএ/জেএএম