৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক মোকাবিলায় প্রস্তুত আওয়ামী লীগ
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৯:৫৪
হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি। এ রায়কে ঘিরে বিএনপির যে কোনো কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত শাসক দল আওয়ামী লীগ। এছাড়া গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে পুলিশ ভ্যানে বিএনপি কর্মীদের অতর্কিত হামলার ঘটনায় শাসকদল আওয়ামী লীগ আরও সর্তক অবস্থান নিয়েছে।
এরইমধ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে সর্তক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও নানা কর্মসূচি পালন করছে। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের আগের আন্দোলনের চিত্র স্থানীয় জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আগামী সোমবার ৫ ফেব্রুয়ারি মহাজোটের শরীকদলগুলোর বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামীকাল রোববার ঢাকা মহানগর উত্তর বর্ধিত সভা আহ্বান করেছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি মাঠে থাকতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া যুবলীগ ঢাকায় এরই মধ্যে ১০০টি ইউনিট কমিটি গঠন করেছে।
খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিনই উভয় দলের নেতারা মধ্যে চলছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নেতিবাচক রায় হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোন ধরনের সহিংস কর্মসূচি দেওয়া হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, হাইকোর্টের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে, এই ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এজন্য সরকার নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারে। কোনো বিশৃঙ্খলা, নাশকতা এবং সহিংসতার চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি ৮ ফেব্রুয়ারি কি করতে পারে তা গত ৩০ জানুয়ারি সারাদেশের জনগণ এরইমধ্যে দেখেছে। এই ঘটনায় দেশের সবাই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি আমরা রাজপথে থাকব। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রতিটি বিভাগীয় শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে দলের নেতাকর্মীরা অবস্থা নেবে এবং পথসভা করবে। রায়কে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া হবে না। এছাড়া রায়ের আগে ও পরে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা হবে।
এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশ প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটিকে সম্ভাব্য সকল ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা ডেকেছে।
এ সভায় রাজধানীর তৃলমুলের নেতাদের আসন্ন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রতিটি এলাকার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে আমরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করে ৮ ফেব্রুয়ারির জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ওইদিন আমাদের নেতা কর্মীরা রাজপথে অবস্থান করবে। তিনি জানান, ৪ ফেব্রুয়ারির বর্ধিত সভায় এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ ১০০টি ইউনিট কমিটি গঠন করেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলা’কে বলেন, আমরা এখনও কেন্দ্র থেকে লিখিত কোন নির্দেশ পাইনি। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের প্রতিটি ওর্য়াডে আমাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান করবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী সারাবাংলা’কে বলেন, ওইদিন চট্টগ্রাম শহরের ১৪টি স্থানে আমাদের নেতা কর্মীরা অবস্থান নিবে এবং পথসভা করবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগরের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সারাবাংলা’কে জানান, রায় হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। আওয়ামী লীগ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি এতে কেউ ব্যাঘাত ঘটনায় আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগনকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা মেনে নেব না। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এইচএ/টিএম/একে