একাদশে ভর্তিতে হয়রানি, বোর্ডে ধরনা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
৩০ জুন ২০১৯ ১৯:৩৪
ঢাকা: ২০১৯ সালে মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেও একাদশে ভর্তি হতে এসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ভর্তি হতে পারছেন না। শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও চেয়ারম্যানের রুমে ধরনা দিতে হচ্ছে তাদের।
হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণেই এখনো কোনো কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। শিক্ষা বোর্ডও কিছু কিছু জটিলতার কথা স্বীকার করে নিচ্ছে। তবে সেসব জটিলতা নিরসন করে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি তাদের।
আরও পড়ুন- এখনো কলেজে ভর্তি হয়নি ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
ভর্তি নিশ্চায়নের পর সিকিউরিটি কোড না আসায় কলেজে ভর্তি হতে পারেননি নারায়ণগঞ্জের শাহিন ইসলাম। কোড পেতে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এসেছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড অফিসে। এসেছেন আজ রোববার (৩০ জুন) সকালেও। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও কলেজ পরিদর্শক হারুন অর রশিদের দেখা পাননি তিনি। ফলে নিশ্চায়ন পাওয়া হাজী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া কলেজে তার ভর্তি হওয়ার বিষয়টি এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শাহিন ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, জীবনের নতুন একটি অধ্যায় এমন অনিশ্চয়তার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। একলাস উদ্দিন কলেজ আমার বাড়ির পাশে, এজন্য অন্য কোনো কলেজে ভর্তির চয়েজ দেইনি। আমার সে স্বপ্নে গুড়ে বালি! শেষ পর্যন্ত হয়তো কলেজে ভর্তি হওয়াই হবে না! উল্টো ভর্তি হতে এসে হয়রানি হতে হলো।
পঞ্চাশোর্ধ্ব তানজিনা ইয়াসমিন দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষা বোর্ডের বারান্দায়। তিনি এসেছেন ছেলের ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে। এই জটিলতাও শাহিনের মতোই। ছেলেকে মিরপুরে নিজের কাছে রেখে পড়াতে চেয়েছিলেন তানজিনা। কিন্তু ছেলের নামের পাশে কলেজ এসেছে মতিঝিল আইডিয়াল। অথচ অনলাইন আবেদনে এই কলেজের নামই দেয়নি তার ছেলে!
কেন এমন হলো— জানতে কলেজ পরিদর্শকের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছেন তানজিনা। সারাবাংলাকে এই মা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর গত ১০ বছর ধরে ছেলেকে একা একা মানুষ করেছি। এখন আমার কাছে এত টাকা নেই যে ছেলেকে মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি করব। সরকারি একটি কলেজে ছেলে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম, ঢাকা কলেজ হলে ভালো হতো। কিন্তু চয়েজ দিয়েও ঢাকা কলেজ পাইনি। কিন্তু যে মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ ছেলে পেয়েছে, সেটা চয়েজই দেইনি।
আরও পড়ুন- এখনো কলেজ নিশ্চায়নের বাইরে ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
তানজিনা ও শাহিনের মতো কয়েক হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক রোববার সকাল থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এসে ভিড় করেছেন। সবার অভিযোগ, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট মানসম্পন্ন নয়। সে কারণেই তারা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে।
এ বিষয়ে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, যাদের সিকিউরিটি কোড আসেনি বা ফোন নাম্বারে ভুল ছিল, তাদের ঝামেলা আমরা সমাধান করে দিচ্ছি। কিন্তু যারা মাইগ্রেশন সংক্রান্ত জটিলতা কিংবা কলেজ পছন্দ হয়নি— এমন আবদার নিয়ে এসেছে, তাদের ব্যাপারে কতটুকু কী করতে পারব, সেটি ঠিক বলতে পারছি না।
এবারের কলেজ ভর্তির ওয়েবসাইটটি তত্ত্বাবধান করেছেন বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়েবসাইট নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ শুনিনি। যারা বলছে সিকিউরিটি কোড আসেনি বা নিশ্চায়ন ভুল হয়েছে, তারা সংখ্যায় খুব অল্প। আমার মনে হয় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে কোথাও তারা কোনো ভুল করেছে। তারপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, যারা এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি, তাদের জটিলতা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছি।
এদিকে, একাদশ শ্রেণিতে সারাদেশে তিন ধাপের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনো চার লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার পর ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া খানিকটা শিথিল করা হবে।
২০১৯ সালের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন শিক্ষার্থী পাস করে। তাদের মধ্যে তিন ধাপে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৩২৬ শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে চার লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৯ শিক্ষার্থী এখনো ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরেই থেকে গেছে।
সারাবাংলা/টিএস/টিআর