সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিতে বাজেট বরাদ্দ নেই
২ জুলাই ২০১৯ ১১:৫১
ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকটের বিপরীতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি চারটি ব্যাংক থেকে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ১৯ হাজার কোটি টাকার চাহিদাপত্র দিলেও আমলে নেয়নি অর্থ মন্ত্রনালয়।
এদিকে, ৩০ জুন শেষ হয়ে যাওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট থেকে দু’টি ব্যাংকের জন্য মাত্র ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে, এ অর্থ দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি হিসেবে এবং একটি ব্যাংকের সরকারি অংশের শেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মূলধন পুনর্গঠন খাতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকে রোববার (৩০ জুন) দু’টি ব্যাংকের বিপরীতে ছাড় করা হয় ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা এবং গ্রামীণ ব্যাংকে থাকা সরকারি শেয়ার ধরে রাখার জন্য দেওয়া হয় এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অন্য কোনো ব্যাংককে আর কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির মূল কারণ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য জনগণের করের টাকায় প্রতিবছর এ ব্যাংকগুলোকে শত শত কোটি টাকা দেওয়া হয়। অর্থ দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এ ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণে এবার তাদের কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।
দশ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটি চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, মূলধন ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ঘাটতি পূরণের ব্যাংকটির প্রয়োজন ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ। এর পরের অবস্থানে আছে জনতা ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা এ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন ৬ হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার ৪ হাজার কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরো এক কোটি ১২ লাখ টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত ৪ অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। এ ব্যাংকটিকে মোট দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এইচএ/জেএএম
বাজেট বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের মূলধন মূলধন সংকট রাষ্ট্রীয় ব্যাংক