Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা প্রশ্নে বরফ গলছে না!


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:২৬

এমএকে জিলানী

ঢাকা: রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে চতুর্মুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সবগুলো বৈশ্বিক ফোরাম এবং মোড়ল রাষ্ট্রগুলো এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। হাই প্রোফাইল রাষ্ট্র নায়কেরা বাংলাদেশ সফরও করছেন। কিন্তু বরফ গলছে না।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাড়া পেতে এবং মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টিতে ৬ মাস ধরে দক্ষতার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। ফল হিসেবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়াসহ আরব দেশগুলোর সমর্থন এসেছে।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি, আসিয়ানসহ বৈশ্বিক ফোরামের প্রতিনিধিরা এই সঙ্কটের গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করে ভুক্তভোগিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। আসিয়ানের সংসদীয় কমিটির এমপিরা মিয়ানমারের প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনের সঙ্গে যুক্ত মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিমন্ত্রী ড্যান রোজেনব্লুম। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাখাইনের ঘটনাকে জাতিগত নিধন উল্লেখ করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, চীন, জাপান, সুইডেন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে এই ইস্যুতে কক্সবাজারের শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছেন। তারা সবাই এ ব্যাপারে মিয়ানমারকে আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশের মন্ত্রীরাও কক্সবাজারের শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, একই ইস্যুতে চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছেন সুইজাল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বারসে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রায়, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ আসার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, রোহিঙ্গা ফেরতের ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা ভাল না। কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এই ইস্যুর সঙ্গে যেভাবে জড়িত করতে পেরেছি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বও যেভাবে চেপে ধরেছে তাতে এবার আমরা ভালো ফলাফল প্রত্যাশী। আমরা কনফিডেন্ট।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গ প্রশ্নে ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু মিয়ানমারকে চাপ দিতে যা যা করার প্রয়োজন ছিল তা এই তিনদেশের সমর্থন ছাড়াই করতে পেরেছি। তাদের অবস্থান আমাদের কাজে কোনো বাধা বা অসুবিধার সৃষ্টি করেনি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন ভেটো দেয়, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়াও আরও বৈশ্বিক ফোরাম আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পক্ষে কথা বলেছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান বাংলাদেশের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। ওই ৩ দেশ পক্ষে ভোট দিলে ভালো হতো, কিন্তু ভেটো না দেওয়াতে বিশেষ কোনো ক্ষতিও হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা তাতে সবারই সমর্থন ছিল। বাংলাদেশেরও সমর্থন ছিল। যে দেশগুলো মিয়ানমারের সেনাশাসন বদলে গণতন্ত্রের পথে যেতে সহায়তা করেছিল, সেই জায়গার অগ্রভাবে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রশাসন। সেই জায়গাতে এই তিনদেশই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকার একাধিক রাষ্ট্র ও সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন গত সপ্তাহে ওই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, এই সঙ্কট সমাধানে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে আই-ওয়াশ, নিরপেক্ষভাবে এই কাজ করতে গিয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রী সু চির সঙ্গে ঝামেলা বেধে যায়, আর এ জন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।

বিল রিচার্ডসন বলেন, সু চি বা ওই কমিটির কাউকেই কখনো রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করতে দেখিনি। তারা সবসময়েই এই শব্দটি সযত্নে এড়িয়ে যান। এই থেকেই বোধা যায় যে এই সঙ্কট সমাধানে তারা কতোটা আন্তরিক।

তিনি আরও বলেন, রাখাইনে যে নির্যাতন চলেছে তা গণহত্যাকেও হার মানায়। এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতেই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের আরও চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন যাতে মিয়ানমার এই সমস্যা সমাধানে বাধ্য হয়।

সারাবাংলা/এসআই

রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা ক্যাম্প রোহিঙ্গা সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর