ঢাকা কাস্টম সার্ভারে ধীরগতি, নেতিবাচক প্রভাব রাজস্ব আদায়ে
৩ জুলাই ২০১৯ ০৮:৫০
ঢাকা: বৈদেশিক বাণিজ্যে দ্রুত শুল্কায়ন ও রাজস্ব বাড়াতে ১৯৯৫ সালে ঢাকা কাস্টম হাউসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অ্যাসাইকুডা পদ্ধতি (অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টম ডাটা) চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বর্তমানে পদ্ধতিটি চালু থাকলেও সার্ভারে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কাস্টম ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তাদের। ফলে, দ্রুত পণ্য শুল্কায়ন ও রাজস্ব আহরণে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ঢাকা কাস্টম হাউসে অ্যাসাইকুডা স্পিড (২.৬ ভার্সন) চালু করে এনবিআর। আর তখন থেকে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল কার্যক্রম চালু হয়। এরপর অ্যাসাইকুডা সিস্টেমটি আরও উন্নত হয়ে অ্যাসাইকুডা প্লাস ভার্সনটি (২.৮ ভার্সন) আসে। এরপর এনবিআর ২০১৩ সালে প্রায় ৪২ কোটি টাকা খরচে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ওরাকল সার্ভারটি নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল কাস্টম হাউসগুলোতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (ওরাকল সার্ভার) ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমটি চালু হওয়ার আগে সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের নির্দেশনা ছিল তাদের বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করবে বিভিন্ন জায়গা থেকে তথা ঢাকা কাস্টমস হাউস থেকে নয়। কিন্তু সকল সিঅ্যান্ডএফ সদস্যরা তাদের বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে ঢাকা কাস্টম থেকে। ফলে, সার্ভার একসঙ্গে সাবমিট নিতে না পারায় ধীরগতি হয়ে যায় এবং বিল অব এন্ট্রি ব্লক হয়ে যায়। তখন একটা বিল অব এন্ট্রি শেষ করতে ঘণ্টাও পার হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, ঢাকা কাস্টম হাউসের ইন্টারনেট সংযোগ বিটিসিএল থেকে নেওয়া। এই লাইনটি মাটির নিচ থেকে ক্যাবল তারের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া। প্রায়ই এই ক্যাবল তার কাটা পড়ার কারণে ইন্টারনেট সমস্যা দেখা দেয়। অপরদিকে ব্রড ব্র্যান্ড যে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে সেটা পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিতে না পারায় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সার্ভারে প্রবেশ করতে সমস্যা হয়। এতে বিল অব এন্ট্রি সাবমিট হতেও সময় লাগে। ফলে, কাস্টম কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় ধরে হাউসে থাকতে হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, সময়মতো বিল অব এন্ট্রি বা বিল অব এক্সপোর্ট না হলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা যায় না নির্দিষ্ট সময়ে। একদিকে সময়মতো রফতানি করতে না পারায় এক্সপোর্ট অর্ডারও বাতিল হওয়ার শঙ্কা থাকে। আর ভোগান্তি তো আছেই। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারায় অনেক সময় কোম্পানির ক্ষতিও হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানে এনবিআরের জরুরী নির্দেশনা চাই।
ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কাস্টম হাউজের ইন্টারনেট সংযোগ বিটিসিএল থেকে নেওয়া। অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগে থাকে না। ফলে, সার্ভার কাজ করে না। তিনি আরও দাবি করেন, একই সার্ভারে দেশের সকল কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি সাবমিট হয়। সবসময় সার্ভার সচল থাকে। ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল এবং একসঙ্গে একাধিক বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করার কারণে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার ও এনবিআর সদস্য প্রকাশ দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড তথা সিস্টেম ধীর গতি হওয়ার কারণ একসঙ্গে অনেকগুলো বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করা হয়। কিন্তু এই সিস্টেমটি চালু করার আগে সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের নির্দেশনা ছিল তারা বাইরে থেকে তাদের বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিল অব এন্ট্রি ঢাকা কাস্টমস হাউসে সাবমিট করা হয়। আর বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার বিল অব এন্ট্রি অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে সাবমিট হচ্ছে।
এছাড়া ইন্টারনেটের ধীরগতি, ক্যাবল লাইনের সমস্যা তো আছে। সবমিলিয়ে একটা হ-জ-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হওয়ায় সার্ভার ধীরগতিতে চলছে। তবে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা যদি বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করে তাহলে সার্ভারে ধীরগতির সমস্যা থাকবে না।
সারাবাংলা/এসজে/জেএএম