‘প্রসব বেদনা সইতেই হবে’
৬ জুলাই ২০১৯ ১১:৪০
ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া এলাকার মূল সড়কটিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ তিনমাস আগে শুরু হলেও এখনো তা শেষ হয়নি। এই সড়কে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্টর্ম সুয়ার (বৃষ্টির পানি যাওয়ার ড্রেনেজ) বসানোর কাজ চলছে। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় পুরো রাস্তা। এখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কারণে চরম ভোগান্তিতে আছেন তারা।
বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমানো যায় কি- না জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসির) অঞ্চল-২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসব বেদনা সইতেই হবে। প্রসব ব্যথার যেমন আনন্দ থাকে। তেমনি এ উন্নয়ন কাজ শেষে যখন এ রাস্তা দিয়ে মানুষজন হাঁটবে তখন তাদেরও ভালো লাগবে।’
স্থানীয়রা জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সড়কে সেবা সংস্থার কোনো উন্নয়ন করতে হলে ২৮ দিন বা চার সপ্তাহের মধ্যেই তা শেষ করতে হয়। কিন্তু তিলপাপাড়া সড়কে উন্নয়ন কাজে মানা হয়নি সে নিয়ম। মাসের পর মাস পার হয়ে যাচ্ছে খোঁড়াখুঁড়ি করেই।
এই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই বছরে একাধিকবার ওই সড়কে উন্নয়নের কাজ হয়েছে। সবশেষ ছয়-সাত মাস আগেও ওয়াসা স্যুয়ারেজ লাইন বসাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। তাদের কাজ শেষ হওয়ার চার মাস পরেই আবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এবার ৪২ ইঞ্চি স্টর্ম সুয়ার লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় পুরো সড়কই খোঁড়া হয়েছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার তাগিদ থাকলেও অনেক সময় তা আবহাওয়ার কারণে সঠিক সময়ে শেষ হয় না। আবার সড়কে মানুষের পায়ে হেঁটে যাতায়াতের জন্য সুযোগ রাখলেও রিকশা-সিএনজি সে সুযোগ কাজে লাগায়। আর তাদের কারণে উন্নয়ণ কাজের ব্যাঘাত ঘটে বলে সড়কে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলাচল অনুপযোগী রাখা হয়।
প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছে ১৮ মাস। সবে তিন মাস চলছে। আগে ছিল ২৪ ইঞ্চি পাইপ। এখন বসানো হচ্ছে ৪২-৪৪ ইঞ্চির পাইপ। আর এগুলো বসানো হলে এলাকায় জলাবদ্ধতার কোনো শঙ্কা থাকবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্টর্ম সুয়ার লাইন প্রকল্পটি বছর মেয়াদী প্রকল্প। এটির কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগে কারণ, মাটি কেটে একটা সুয়ার পাইপ লাইন বসানোর পর ২৮ দিন পর্যন্ত কিউরিং হয়। এসময় এর ওপর দিয়ে কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করলে কাজের ব্যাঘাত ঘটবে। পাইপগুলো ভেঙে যাবে। এজন্য অনেকে মনে করে রাস্তার ওপর মাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি। আসলে এটা করা হয়েছে কারণ একটা রিকশা চলাচল করার মত জায়গা রাখা হয় তাহলে ওই রিকশার দেখাদেখি সিএনজিও চলাচল করবে। এতে পাইপ লাইন ভেঙে যাবে। তাই এটা করা হয়েছে।’
সরেজমিনে খিলগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের নিচে রেলগেট এলাকার মোড়ে বনশ্রী ও মেরাদিয়াগামী সড়কে পুরো রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। চারদিকে রাস্তার মাটি উঁচু-নিচু করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। একই অবস্থা তিলপাপাড়া সড়কেও। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাটির স্তুপের কারণে বাসিন্দারা স্বাভাবিক চলাচলও করতে পারছেন না। যানচলাচল তো দূরের কথা। আবার এমন অবস্থা কতদিন থাকবে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। অনেক ভাড়াটিয়া ওই এলাকা ছাড়ছেন রাস্তার দুর্ভোগের কারণে।
তিলপাড়ার স্থানীয় ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক ও বাসিন্দা মুকিত খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনমাসের বেশি সময় ধরেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। কবে শেষ হবে কে জানে। দেড়-দুমাস দোকানে ক্রেতা আসে না। আমার মতো অনেকেরই একই অবস্থা। উন্নয়ন হোক তাতে অসুবিধা নেই, কিন্তু কাজটা তো দ্রুত শেষ করতে হবে যাতে আমাদের কষ্ট না হয়।’
আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই আর রাস্তায় হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে কষ্ট করে। রিকশা তো দূরের কথা। পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায় না।’
সারাবাংলা/এসএইচ/এমআই/জেডএফ