Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কনস্টেবল নিয়োগ: ঘুষের ‘অভিযোগ ছাড়াই’ চট্টগ্রামে মনোনীত ১০৮৬


৮ জুলাই ২০১৯ ২০:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক হাজার ছিয়াশি (১০৮৬) জন নারী-পুরুষকে কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য মনোনীত করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ, যা দেশের মধ্যে পুলিশের সকল ইউনিটে সর্বোচ্চ। নিয়োগের জন্য ঘুষ লেনদেন না করতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উপজেলায়-উপজেলায় মাইকিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালায় জেলা পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া কিংবা হয়রানির কোনো অভিযোগ ছাড়াই জেলা পুলিশ ১০৮৬ জনকে মনোনীত করতে পেরেছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সকল ইউনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে যাতে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ না ওঠে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন তারা। চট্টগ্রামের আশপাশের জেলাগুলোতে কনস্টেবল নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২০০ জন। ঢাকার মতো বড়ো জেলায়ও হয়েছে এক হাজারের কাছাকাছি। সর্বোচ্চ সংখ্যক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে তাই তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কনস্টেবল নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরে তাদের মধ্যে স্বস্ত্বি এসেছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আইজিপি স্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন- ১০৩ টাকায় কনস্টেবল পদে যেন এদেশের সন্তানরা চাকরি পায়। অতীতেও জেলা পুলিশে আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কনস্টেবল নিয়োগ দিয়েছিলাম। এবারও আমরা শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিই যে, একটি অনিয়মের অভিযোগও আসতে পারবে না। ১০ হাজার ছেলেমেয়ে এসেছিল। তাদের ভেতরে বিভিন্ন পর্যায়ে আমি নিজস্ব ইনফরমার রেখেছিলাম, যাতে অনিয়মের চেষ্টা কেউ করলে সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে তথ্য আসে। কিন্তু কোনো তথ্য আমরা পাইনি। ফরম কেনার জন্য তিন টাকাও আমরা নিইনি। শুধুমাত্র ১০০ টাকা খরচ হয়েছে তাদের।’

জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গত ১ জুলাই নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ হাজির হন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ শেষে ৭ হাজার ৫১৮ জনের শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪২২ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়।

২ জুলাই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। ওইদিনই মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ জুলাই (রোববার) মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য মনোনীত করা হয়েছে ১০৮৬ জনকে।

জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, মনোনীত হওয়া ১০৮৬ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত এবং মাদকাসক্ত না হলে মনোনীত সবাই কনস্টেবল পদে চাকরি পাবেন।

জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনোনীত ১০৮৬ জনের মধ্যে ৯২৮ জন পুরুষ ও ১৫৮ জন নারী। আবার সাধারণ কোটায় পুরুষ ৮২১ জন ও নারী ১৪৯ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুরুষ ৭৯ জন ও নারী ৫ জন, পোষ্য কোটায় পুরুষ ১০ জন ও নারী ২ জন, আনসার কোটায় পুরুষ ১০ জন ও নারী ১ জন, এতিম পুরুষ ৩ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পুরুষ-৫ জন ও নারী ১ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। অপেক্ষমান রাখা হয়েছে ১০ জনকে।

জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, যারা কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই গরীব পরিবারের সন্তান। কৃষক, রিকশাওয়ালা-ভ্যানওয়ালার ছেলেও আছে। তাদের কোনো দালাল-প্রতারকের খপ্পরে পড়তে হয়নি। আমরা নিশ্চিত- কারও সঙ্গে তারা অর্থের লেনদেনও করেনি। কারণ, আমরা শুরু থেকেই এই বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। অন্যান্যবার বিভিন্ন অভিযোগ পেতাম, এবার কোনো অভিযোগ পাইনি।

জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে মনোনীতদের মধ্যে কৃষকের সন্তান আছে ৩০১ জন। পোশাক কারখানা, নির্মাণ পেশা, কাঠমিস্ত্রি, মৎস্যজীবী, ভাসমান হকার, নৈশপ্রহরী, কারখানার শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান আছে ১২২ জন। বাবা নেই অথবা থাকলেও অসুস্থ, এমন পরিবারের সন্তান আছে ১৬৭ জন। প্রবাসী শ্রমিকের সন্তান আছে ১০৩ জন। রিকশা-ভ্যান-সিএনজি অটোরিকশা চালকের সন্তান আছে ৫৬ জন। ১৮৯ জনের বাবা ক্ষুদ্র দোকানি।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর সন্তান ১০৭ জন, শিক্ষকের সন্তান ১৯ জন, চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের সন্তান ৩৩ জন, পল্লী চিকিৎসকের সন্তান ৭ জন ও গ্রাম পুলিশের সন্তান আছে ২ জন।

প্রাথমিকভাবে মনোনীত সবাইকে ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) জেলা পুলিশ লাইনে হাজির হতে বলা হয়েছে। তাদের উদ্দেশে ব্রিফিং দেবেন জেলা পুলিশ সুপার।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

কনস্টেবল ঘুষ নিয়োগ পরীক্ষা পুলিশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর