Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলাবদ্ধ হাসপাতাল, দুর্ভোগে রোগী


১৩ জুলাই ২০১৯ ১৯:৩৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রবল বর্ষণের মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে থাকা মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকতে শুরু করে। একপর্যায়ে বাড়তে বাড়তে হাঁটুপানি হয়ে যায়। রোগীদের শয্যাগুলোও পানিতে ভাসার উপক্রম হয়ে যায়। এর আগেই অবশ্য তড়িঘড়ি করে নিচতলা থেকে রোগীদের উপরে নেওয়া হয়।

এদিকে সকাল গড়িয়ে বিকেল-সন্ধ্যা হতে চললেও সেই পানি নামার কোনো লক্ষণ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন, চিকিৎসহ সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তিরও কোনো শেষ নেই।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর বর্ষায় বৃষ্টি কিংবা জোয়ারে, এমনকি আমবস্যা-পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানিতে হাসপাতালটির নিচতলা তলিয়ে যায়। কিন্তু গত একসপ্তাহের বৃষ্টিতে হাসপাতালের নিচতলায় যে পরিমাণ পানি জমেছে, তা আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বলছে, নিচতলা কয়েক দফা উঁচু না করলে হাসপাতালের ভেতরে ‘একগলা’ পানি জমতো।

শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ভোগান্তির চিত্র। বিকেলেও হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটুর কাছাকাছি পরিমাণ পানি জমে আছে। সেই পানিতে পলিথিন, কার্টনের কাগজসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনাও দেখা গেছে। হুইলচেয়ারে রোগী বসিয়ে পানি মধ্য দিয়েই স্থানান্তর করতে দেখা গেছে আয়াদের। বৃদ্ধ বাবা, শিশু সন্তানকে কাঁধে নিয়ে পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছের রোগীর স্বজনেরা।

এছাড়া রোগীদের স্বজনরা বিভিন্ন প্রয়োজনে হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছেন নোংরা পানি পার হয়ে। চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মচারিদেরও আনুষাঙ্গিক কাজ সারতে হচ্ছে সেই পানি মাড়িয়ে। অনুসন্ধান ডেস্ক আর আউটডোরের সামনে রাখা বেঞ্চ-চেয়ারের ওপরে উঠে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে। হাসপাতালের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর ভোগান্তিতে বিস্ময় রোগীর স্বজনদের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ১৪ দিন বয়সী সন্তান নিয়ে গত ৪ জুলাই থেকে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে আছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের নুরুল আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘৮ তারিখ একবার পানি উঠেছিল। আজ (শনিবার) আবারও উঠেছে। প্রতিদিন দুপুরের দিকে জোয়ারের পানি হাসপাতালের সামনে রাস্তায় উঠলেও ভেতরে আসেনি। কিন্তু বৃষ্টি বেশি হওয়ায় দুইদিন হাসপাতালের ভেতরেও পানি এসে গেছে।’

‘আমার ছেলে দোতলায় আছে। কিন্তু কখনো ওষুধ, কখনো খাবার আনার জন্য বাইরে যেতে হয়। পানিতে খুবই ময়লা। সেগুলো পার হয়ে যেতে খারাপ লাগে। অস্বস্ত্বি হয়। কিন্তু কি করব ? এতদিন পত্রিকায় পড়েছি, এই হাসপাতালে পানি ওঠে। কিন্তু এবার যা দেখলাম তা অবিশ্বাস্য। একটা হাসপাতালের অবস্থা এমন হয় কিভাবে?’ বলেন নুরুল আলম।

গত ৫ জুলাই থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১১ দিন বয়সী ছেলে নিয়ে হাসপাতালে আছেন রাঙামাটি থেকে আসা মো. সাইফুল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে নিচতলায় ওয়ার্ডে ছিল। সকালে যখন পানি এসে যায়, তখন সব রোগীকে দোতলায় তুলে ফেলা হয়। পানির মধ্যে ছেলেকে কোলে নিয়ে দোতলায় গেছি।’

হাসপাতালের নিচতলার শিশু ওয়ার্ডে ৮৫টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ৭১টি শিশুরোগের, বাকি ১৪টি নাক, কান ও গলার রোগীদের। ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলে নিচতলায়। পানি জমে যাবার পর হাসপাতালের বর্হিবিভাগে রোগী দেখা বন্ধ হয়ে যায়।

হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার পানি বেশি জমছে। নিচতলা আমরা অনেক উঁচু করেছি। তারপরও এক থেকে দেড় ফুট পানি জমেছে। নিচতলা যদি উঁচু না করতাম, তাহলে বোধহয় গলা সমান পানি উঠত। নিচতলায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা হয়। পানি উঠলে তাদের সমস্যা বেশি। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের দোতলায় নিয়ে খালি সিটে রাখতে হয়। এটা আমাদের জন্য বড় বিড়ম্বনা। আমাদের নতুন ভবন হচ্ছে। সেখানে গেলে আমরা নিচতলায় পানির দুর্ভোগ থাকবে না। তবে সড়কে এবং হাসপাতাল এলাকায় যে পানি উঠে, সেটা তো থাকবেই।’

আরও পড়ুন:
নদীর ঢেউ সড়কে 
টানা বর্ষণে ফের ডুবল চট্টগ্রাম, পাহাড়ধস

সারাবাংলা/আরডি/এমও

আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল জলাবদ্ধতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর