Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে মাঝারি বন্যার আশঙ্কা


১৪ জুলাই ২০১৯ ২০:০৯

ঢাকা: ভারতের আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোতে উপচে উঠছে পানি। কোথায়ও কোথাও পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবার কোনো কোনো জেলায় এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, মাঝারি বন্যায় এবার তলিয়ে যেতে পারে অনেকগুলো জেলা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উজানে বন্যা হওয়ায় এবার বাংলাদেশেও মাঝারি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আষাঢ়ের শেষদিকে যে রকম বৃষ্টি হয়েছে, শ্রাবণের শুরুতেও যদি এমনটা চলতে থাকে এবং উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে আসে তাহলে বন্যার আশঙ্কা থাকে। তবে এখন পর্যন্ত দেশের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মঞ্জুর হাসান জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে আগামী বুধবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত পানি বাড়বে। উচ্চতা বাড়ার পর কিছুদিন সেই পানি স্থিতিশীল থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে পানির উচ্চতা কমতে পারে। তবে আসামের বন্যা পরিস্থিতি বাংলাদেশে বেশ প্রভাব ফেলবে।

এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাফায়েত হোসেন জানিয়েছেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা অবনতি হয়েছে। পাশাপাশি অবনতি হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও।

সাফায়েত বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, ধরলাসহ বেশিরভাগ নদীতেই বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুদিন বৃষ্টি হলে এসব নদীর পাশাপাশি অন্যান্য নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করবে। বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণেই বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, গত কয়েক দিনে টাঙ্গাইলে যমুনাসহ স্থানীয় নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। জেলার সদর, নাগরপুর, ভূঞাপুর ও কালিহাতী উপজেলায় বেশ কয়েকটি গ্রাম যমুনার ভাঙ্গনের শিকার হওয়ায় অনেক পরিবার এরইমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

গত ২৪ ঘন্টায় এলাকা ভেদে যমুনার পানি  ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে এই নদী বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং সিরাজগঞ্জে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ কারণে এসব এলাকার নিচু জনপদগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে ভারতের আসাম প্রদেশের ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ভাঙনে ১০টি গ্রামের বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ধানের বীজ তলাসহ অনেক ফসলি জমি ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

কুশিয়ারা নদীর পানি মৌলভীবাজারের শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ও মনু নদীর পানি ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের অন্যান্য নদীগুলোর মধ্যে সুরমা, পিয়াইন, ধলাই নদীর পানিও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি সিলেটের বিভিন্ন পয়েন্ট ভেদে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ২০ সেন্টিমিটারের ভেতরে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেমি ওপরে রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশকয়েকটি ইউনিয়নের। বন্ধ রয়েছে উপজেলার দুটি পাথরকোয়ারি। পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানও বন্ধ রাখা হয়েছে।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ি, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর বানের জলে প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের পাশের জেলা নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অবিরাম বৃষ্টি হলে এ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে।

সারাবছর প্রায় শুকিয়ে থাকা তিস্তা-ধরলাসহ উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ নদী বর্ষায় প্রমত্তা হয়ে উঠেছে। রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে পানি সামান্য কমে বিপদসীমার ২০ সেমি  ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ও ধরলা তীরবর্তী জনপদগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায় অনেক অঞ্চল পানিবন্দি থাকায় সাধারণ মানুষজন পরিবার-পরিজন এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর রাস্তা ও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এজন্য জেলাটির নদীসংলগ্ন চর এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

উত্তরবঙ্গের আরেকটি জেলা গাইবান্ধায়ও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। জেলার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির বিপদসীমার ৩৯ সেমি, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেমি, ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশটির আসাম প্রদেশের ২৭টি জেলার মধ্যে কমপক্ষে ২০টি জেলায় আজও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বর্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরের মেঘালয় প্রদেশেও।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বন্যা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাহাড়ি ঢলের কারণে এ সপ্তাহের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হতে পারে।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

অবনতি পাহাড়ি ঢল বন্যা পরিস্থিতি বৃষ্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর