Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপলস লিজিং: ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাবে ৮৩১ কোটি টাকা


১৫ জুলাই ২০১৯ ১৩:৩৮

ঢাকা: পিপলস লিজিংয়ে আটকে গেছে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৩১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ৩টি বেসরকারি ব্যাংক। এছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৫শ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেনীর আমানতকারীর ৭শ কোটি টাকা পিপলস লিজিংয়ে আটকে গেছে। উল্লেখিত টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পিপলস লিজিংয়ে মেয়াদী আমানত হিসাবে জমা রেখেছিল।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পিপলস লিজিংয়ে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত বাবদ পাওনার পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে ইন্ট্যারন্যাশনাল লিজিংয়ের। প্রতিষ্ঠানটির আমানতের পরিমাণ ২২৭ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ৬১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স লিমিটেডের ৫৫ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৪০ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ২৮ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্সের ১০ কোটি টাকা আমানত বাবদ আটকে গেছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও ৩টি বেসরকারি ব্যাংকসহ মোট ৮টি ব্যাংকের ৪১০ কোটি টাকা আমনত বাবদ পিপলস লিজিংয়ে জমা আছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৫টি ব্যাংকের ২৪৬ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের ১৬৪ কোটি টাকা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে রুপালি ব্যাংকের ১২২ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৪৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৩৭ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১৪৪ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ কোটি টাকা আমানত হিসাবে পিপলস লিজিংয়ে জমা রয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রায় ৫শ কোটি টাকা আমানত পিপলস লিজিংয়ে আটকে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, কাজী ফার্মস, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমএ)। এছাড়াও, পিপলস লিজিংয়ে ৭শ কোটি টাকা আমানত রয়েছে ৬ হাজার ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারীর। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এসব আমানতকারীরা আমানত ও আমানতের সুদ পেলেও ২০১৮ সাল থেকে তাদের সুদ ও আসল উভয় টাকা আটকে রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, পিপলস লিজিং অবসায়ন হলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সবার আগে টাকা পরিশোধ করা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ অনান্যদের আমানতের টাকা পরিশোধ করা হবে। এ নিয়ে আমানতকারীদের আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। তবে সবকিছু নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।

অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২ এর ৩ এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী পিপলস লিজিং অবসায়নের (লিকুইডেশন) অনুমতি চেয়ে গত ২১ মে অর্থমন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে যাবে। আদালত একজন অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ দিলে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি দায় দেনা নিরীক্ষা হবে। নিরীক্ষার পর পাওনাদারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়াও অবসায়ক প্রতিষ্ঠানটির পাওনা টাকা উদ্ধার করবেন। এভাবে সব দায় দেনা পরিশোধ ও পাওনা টাকা উদ্ধারের পর প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এদিকে গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর ফলে পিপলস লিজিং থেকে কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা তুলতে পারবেন না।

পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: পিপলস লিজিংয়ে বর্তমানে আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭শ কোটি টাকা হলো ৬ হাজার ব্যক্তিশ্রেনীর আমানত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দিতে পারছে না।তবে আমানতের বিপরীতে কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্য্যালয় রাজধানী মতিঝিলের সিটি সেন্টারে। এছাড়া গুলশান এবং চট্টগ্রামে দুইটি শাখা কার্য্যালয় রয়েছে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। মোট শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬৭.৮৪ শতাংশ, উদ্যোক্তা পরিচালদের ২৩.২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৮.৭৬ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

পিপলস লিজিং অবসায়ন পিপলসে আটকে আছে আমানত বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর