মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা, বর-কনেসহ ৯ জনের মৃত্যু
১৫ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৭
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় বরযাত্রীবাহী এক মাইক্রোবাসে পদ্মা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় বর-কনেসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথে উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী এলাকার অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি উল্লাপাড়া থানার পঞ্চক্রোশীতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনে নিয়ে সদর উপজেলার কান্দাপাড়ায় যাচ্ছিল। ওই বরযাত্রীবহরে দুটো মাইক্রোবাস ছিল। প্রথম মাইক্রোবাসে ছিলেন বর-কনে, বরের বোন, বোনের স্বামী, মেয়েপক্ষের এক আত্মীয়। বরযাত্রী বহরে থাকা অপর মাইক্রোবাসটি পেছনে ছিল। সামনের মাইক্রোবাসটি রেলক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করলে এ সময় ট্রেনের ধাক্কা লাগে।
উল্লাপাড়া ফায়ার স্টেশনের ফায়ার লিডার নাজির হোসেন জানান রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ঢাকা যাচ্ছিল। এ সময় ক্রসিংয়ে উঠে পড়া মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায় ট্রেনটি।
মৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্জ সদরের উত্তর কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে বর রাজন (২২), তার নব বিবাহিত স্ত্রী উল্লাপাড়া গুচ্ছগ্রামের সুমাইয়া খাতুন (১৮), বরের মামাতো ভাই আলিক (১০), মাইক্রোবাসের চালক কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল এলাকার মন্টু শেখের ছেলে স্বাধীন (৩০), বরযাত্রী শহরের রামগাতি মহল্লার আব্দুল মতির ছেলে আব্দুস সামাদ (৫০), তার স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪৫), ছেলে শাকিল (২০), কালিয়া হরিপুর চুনিয়াহাটির মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভাষা শেখ (৫৫) ও শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার সুরুত আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (২৫)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন মজুমদার ও উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান কউশিক আহমেদ জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি বেতকান্দি অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ধাক্কা দিয়ে অন্তত আধা কিলোমিটার পর্যন্ত টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই বর-কনেসহ সাত মাইক্রোবাস যাত্রী নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় আরও দুজন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে পাথর ছোড়ে এবং ট্রেনটিকে প্রায় আধঘণ্টা রেললাইনে আটকে রাখে। খবর পেয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধদের রেলপথ থেকে সরিয়ে দিয়। পরে ট্রেনটি এক ঘণ্টা পর ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রোকনউজ্জামান জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে আনা হলে আব্দুল আহাদ মারা যায়। আহতদের মধ্যে সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নাজমুল আহসান নামে একজন অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
উল্লাপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. গোলাম মোস্তফা অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং-এর কারণকে দায়ী করে বলেন, উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং পারাপার হওয়ার সময় বিয়ের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই ৭ মারা যান। রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং-এ কোনো ব্যারিয়ার বা বার্জ ছিল না। এমনকি সেখানে রেল বিভাগের কোনো পাহারাও ছিল না। এ জন্য এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মিজানুর রহমান জানান, উল্লাপাড়া উপজেলার বেতকান্দি অরক্ষিত রেলক্রসিংটি রেল বিভাগের নির্ধারিত কোনও লেভেল ক্রসিং নয়। স্থানীয় লোকজন নিজেদের স্বার্থে চলাচলের জন্য সেখানে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর দেড়ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি ছেড়ে ঢাকার দিকে গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস চালকের অস্থিরতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ট্রেন দেখার পরও তাড়াহুড়া করে রেল লাইন পার হওয়ার চেষ্টার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
মৃতদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন বর মো. রাজন, কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন (৫৫) ও তার ছেলে আজম (২২), চালক স্বাধীন (২৮)। মাইক্রোবাসের চালক কামারখন্দের জামতৈল গ্রামের মন্টু শেখের ছেলে।
উল্লাপাড়া থানার ওসি কৌশিক দেওয়ান জানান, দুর্ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
সারাবাংলা/পিটিএম/একে