রোহিঙ্গা নির্যাতনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় আইসিসি
১৮ জুলাই ২০১৯ ২০:৪৬
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে চায় বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট। তিনি আরও বলেন, আইসিসি বিশ্বাস করে যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নানাবিধ অত্যাচার এবং নির্যাতনের কারণে বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আইসিসি এই নির্যাতনের সত্য ঘটনা তুলে ধরতে চায় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা জানান জেমস স্টুয়ার্ট। এসময় আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদা’র পক্ষে প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন।
জেমস স্টুয়ার্ট জানান, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করার অধিকার আইসিসির আছে কি না, তা জানতে চেয়ে গত ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি আবেদন করেন প্রধান প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদা। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির পর গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে তার এই অধিকার আছে। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই আদালত প্রধান প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদাকে জানান যে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে তদন্ত কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী, তদন্ত কাজ করতে আদালতের চূড়ান্ত অনুমোদন আসবে আরও ৩ মাস পর বা অক্টোবরে।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে আমরা এখন তদন্ত কাজ করতে বাংলাদেশ সফরে আসিনি। আমরা এসেছি, আইসিসি’র নিয়ম-কানুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করতে। আইসিসি’র সঙ্গে মিয়ানমারের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু বাংলাদেশের (স্টেট পার্টনার) রয়েছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং আইন, সংসদ ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইসিসি’র ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে আইসিসি’র সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এই বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা চলছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট বলেন, আইসিসি’র চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব তদন্ত কাজ শুরু করা হবে। দ্রুত যাতে এই কাজ শেষ করা যায় সেজন্য এখন থেকেই আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আইসিসি বাংলাদেশের কাছ থেকে মৌলিক কিছু সমর্থন প্রত্যাশা করে। যার মধ্যে নিরাপত্তা অন্যতম।’
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদা’র প্রতিনিধি দলের পক্ষে প্রসিকিউটর কার্যালয়ের পরিচালক ফাকিসো মচোচোকো বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময়ে (১১ মার্চ) ফাকিসো মচোচোকো গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কাজ চালিয়ে যাবে আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর। এ জন্য দলটি প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহে (প্রিলিমিনারি এক্সামিনেশন) বাংলাদেশ সফর করছেন। এই সফরে তারা আইন, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। পাশাপাশি কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবিরে ভুক্তভোগীদের কথা শুনেছেন।’
প্রসঙ্গত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের একাধিক প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাদের দায়ী করা হলেও মিয়ানমার যেকোনো ধরনের গণহত্যা বা জাতিগত নিধনের কথা অস্বীকার করে আসছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এনএইচ