গরুর হাটকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেই শ্যামপুরে অস্ত্র
১৯ জুলাই ২০১৯ ১৯:৩৮
ঢাকা: রাজধানীর শ্যামপুর থানার গেন্ডারিয়া কাঁচাবাজারে অস্ত্র হস্তান্তরের সময় তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ সময় চারটি পিস্তল, দু’টি রিভলবার, সাতটি ম্যাগজিন ও ১২৮ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নানা ধরনের তথ্য জানালেও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তা খোলাসা করেননি। তবে অভিযানকারী দলের এক পুলিশ সদস্য সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সামনের কোরবানির ঈদে গরুর হাটকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেই অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিল।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম সেন্টারে অভিযানকারী ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্যামপুর এলাকায় গরুরহাট কেন্দ্রিক অস্ত্রবাজি করেন এমন একজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রগুলো সরবরাহ করা হচ্ছিল। ওই সন্ত্রাসীকেও পুলিশ আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এবং পলাতক অন্যদের ধরতে ওই সন্ত্রাসীকে মিডিয়ার সামনে আনা হয়নি।’
এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্যামপুর থানা পুলিশ জানতে পারে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্রের হাত বদল করবে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল শুক্রবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে গেন্ডারিয়া কাঁচাবাজারে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তারা দেখতে পায়, বাজারের এক কর্নারে কয়েকজন গোল হয়ে চেয়ারে বসে আছেন। সেখানে একজন একটি অস্ত্র বের করে কোমরে রাখেন। এরই একপর্যায়ে শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহাগ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুম বিল্লাহ, কনস্টেবল মাহবুব ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আলাদা কয়েকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।’
এ সময় রাজু গাজি, শওকত হোসেন ও মিনহাজুল ইসলাম নামে তিনজনকে ধরতে পারলেও আরও তিনজন পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে গিয়ে ধস্তাধস্তির সময় তিন পুলিশ, ওসি মিজানুর রহমান, এসআই সোহাগ, এএসআই মাসুম বিল্লাহ ও কনস্টেবল মাহবুব আহত হয়েছেন বলেও জানান উপ-কমিশনার।
ওয়ারি ডিসি বলেন, ‘রাজু গাজীর (৪৩) বাড়ি চাঁদপুর। তার কাছে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। মিনহাজুল ইসলাম (২৮) খিলগাঁও এলাকায় থাকেন। খিলগাঁও মডেল কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে পড়েন তিনি। আজ সকালে খিলগাঁও থেকে ওই কাঁচাবাজারে যান তিনি। আর শওকত হোসেনের (৩৮) বাড়ি টাঙ্গাইল, তিনি একজন পাঠাও চালক। তার দাবি, সকালে পাঠাওয়ে করে একজনকে নিয়ে মিরপুর থেকে ওই কাঁচাবাজারে আসেন। তবে অ্যাপসের মাধ্যমে কেউ আসেনি। মূলত তার কাছেই একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগের ভেতরেই বাকি পাঁচটি অস্ত্র ও গুলি ছিল। এছাড়া অস্ত্রগুলোতে গুলি লোডেড ছিল।’
ডিসি ইব্রাহিম বলেন, ‘অস্ত্র কোথায় থেকে এসেছে, কি কাজে ব্যবহারের জন্য অস্ত্রগুলো নিয়ে আসা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করে হচ্ছে। তদন্ত শেষ করার পর অস্ত্রের যোগানদাতা ও অস্ত্রের উৎস সমন্ধে জানা যাবে। যেহেতু তারা সকাল বেলা সেখানে জড়ো হয়েছিল, কাজেই ধারণা করা হচ্ছে তাদের হয়তো কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আবার অস্ত্রগুলো কেনাবেচার উদ্দেশ্যেও নিয়ে আসতে পারে। এমনও হতে পারে যে, অস্ত্রগুলো কাউকে ভাড়া দিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঠিক কি উদ্দেশ্য তা জানার চেষ্টা চলছে। তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হবে। তবে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। ২/৩ জন পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘রাজু গাজীকে আগের রাতে গেন্ডারিয়া কাঁচা কাজারে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্র হাতে দেওয়ার পর একটি জায়গায় আরেকজনের কাছে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। তবে এমন কেউ পালিয়েছে যে সেই ব্যক্তি ও স্থানের নাম বলার আগেই পুলিশ গিয়ে উপস্থিত হয় ঘটনাস্থলে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহীম খান বলেন, ‘৬টি অস্ত্রের মধ্যে তিনটি তুর্কির, একটি ব্রাজিল, একটি জার্মানি ও একটি স্পেনের অস্ত্র ছিল। অস্ত্রগুলো এর আগে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।’
শ্যামপুর থানার মামলায় আগামীকাল আটকদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেখানে এই অস্ত্রের পেছনে আর কারা জড়িত, তাদের বের করা সম্ভব হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও