ট্রাম্পের কাছে অভিযোগের বিষয়ে প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা
২১ জুলাই ২০১৯ ২১:২৫
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ বিষয়ে ইউটিউবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রিয়া সাহা। এ সময় নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও না যাওয়ার কথাও বলেছেন।
রোববার (২১ জুলাই) ইউটিউবে ৩৫ মিনিট ২ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে এই ব্যাখ্যা দিতে দেখা গেছে তাকে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিয়া সাহা এক সাংবাদিককে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। ভিডিওটি প্রিয়া সাহার এনজিও প্রতিষ্ঠান ‘শারি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওতে প্রিয়া সাহা জানান, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোনো উদ্দেশ্যে তার ছিল না। বাংলাদেশ সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন। আর তাই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে অভিন্ন অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেজন্যেই তিনি হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতা চান।
ভিডিওতে সংখ্যাগত তথ্যের বিষয়ে প্রিয়া সাহা জানান, তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের নিখোঁজ হওয়ার যে তথ্য তিনি ট্রাম্পকে দিয়েছেন, তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই নেওয়া।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বইয়ের (২০০১ সালের) ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছে এবং সরকারি সেনসাস রিপোর্টে থেকে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। দেশভাগের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল ২৯.৭ ভাগ। এখন তা কমে ৯.৭ ভাগ। দেশের মানুষ এখন ১৮০ মিলিয়নের মতো। সে অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বাড়লে আমার দেওয়া সংখ্যাটা মিলে যায়। ’
এ ক্ষেত্রে নিজ জেলা পিরোজপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে আমাদের গ্রামে ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবার ছিল। এখন আছে ১৩টি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের ওই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই অধ্যাপক আবুল বারকাত ২০১১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যা ওই সময় গণমাধ্যমেও আসে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রতিদিন ৬৩২ জন হিন্দু দেশ ছাড়ছেন। আমি স্যারের সাথে সরাসরি কাজ করেছিলাম বলে বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত। ‘
এক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার অনুপ্রেরণা হিসেবে দাবি করেন। এ সময় তিনি জানান, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছিল, তখন বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্ব ঘুরেছেন সংখ্যালঘুদের রক্ষায়।
প্রিয়া সাহা আরও বলেন, ‘আমি তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তাঁর কথা অনুসরণে কথা বলেছি। এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় কথা বলা যায়, আমি তাঁর কাছে শিখেছি।’
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে সংগঠনের কেউ জানেন না বলেও অবহিত করেন ভিডিওটিতে।
সাক্ষাৎকারে নিজ জেলা পিরোজপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়েও কথা বলেন প্রিয়া সাহা। এ সময় তিনি দেশের ৯৯ ভাগ মানুষকেই অসাম্প্রদায়িক বলে মন্তব্যে করে বলেন, ‘কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা মৌলবাদকে উস্কে দিচ্ছে।’
মৌলবাদের বিরুদ্ধে নিজের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সবধরনের পরিসংখ্যান দেখলে আমার বক্তব্য পরিস্কার হবে। আশা করি এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সবধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।’
উল্লেখ্য, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া সাহা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ১৭ জুলাই তিনি হোয়াইট হাউজে যান।
সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি জানান, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি এ সময় বলেন, ‘প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমার অনুরোধ, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিচার পাইনি।’
তার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য দেখা যাচ্ছে।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম