৯% সুদে ঋণ বিতরণে ৬% আমানত চায় ব্যাংকগুলো
২১ জুলাই ২০১৯ ২২:৩০
ঢাকা: ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের আগে ৬ শতাংশ আমানত প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চায় ব্যাংকগুলো। রোববার (২১ জুলাই) ব্যাংকার্স সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) এই দাবি জানান। তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ৬ শতাংশ সুদে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সরকারি সংস্থাগুলোও আমানত রাখছে না। তাই ৬ শতাংশ আমানত না পেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের এমডি সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববারের সভায় আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা, শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের মনিটরিং ও আদায় কার্যক্রম, অবলোপন নীতিমালা পর্যালোচনা এবং এসএমই খাতে ঋণ প্রদান। এছাড়াও বিবিধ বিষয় হিসেবে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার নির্ধারণ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকের মালিকরা সুদের কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে তারা সেটা কমিয়ে আনবেন। তবে তা এখনই কমানো সম্ভব নয়। সরকারি সবগুলো ও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক নয়-ছয় সুদহার কার্যকর করেছে। তবে সুদহার কার্যকরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না। ব্যাংকগুলো বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তা করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে খেলাপিঋণ বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, জুনে তাদের খেলাপিঋণ কমেছে। খেলাপিঋণ যাতে ১০ শতাংশের নিচে থাকে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ খেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সুদহার কমাতে ব্যাংকগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে ব্যাংকের তারল্য সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। দেশে রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেড়েছে। ফলে ডলার কিনতে হচ্ছে না। এছাড়াও সঞ্চয়পত্র কেনায় কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়বে।’
সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাংক মালিকরা ঋণে সর্বোচ্চ ৯ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) কার্যকরের ঘোষণা দেয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন ব্যাংকের মালিকরা। বিনিময়ে বেশ কয়েকটি সুবিধা দেওয়া হয় ব্যাংক মালিকদের। এর মধ্যে রয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) কমানো, রেপো রেট কমানো ও মেয়াদ বৃদ্ধি, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা এবং মুনাফার ওপর কর কমানো। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক বোর্ড সভায় করে নয়-ছয় সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সরকারি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। বরং ব্যাংকের তারল্য সংকটের কথা বলে চলতি বছরের শুরু থেকে আমানত ও ঋণের বিপরীতে সুদহার আরও বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ৬ শতাংশ সুদে সরকারি সংস্থার আমানত পেতে হলে ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর বাধ্যতামূলক করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। যেসব ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করেনি সেসব ব্যাংকে সরকারি আমানত না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণায় এসব ব্যাংকের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম