জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ ও বলাৎকার, ইমাম গ্রেফতার
২২ জুলাই ২০১৯ ১৬:১৩
ঢাকা: ‘দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এলাকার মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসার শিক্ষকতাকে কাজে লাগিয়ে একাধিক নারীকে ধর্ষণ ও পুরুষকে বলাৎকার করত ইদ্রিস আহম্মেদ। কেউ প্রতিবাদ করলে জিনের ভয় দেখিয়ে তাকে ধমিয়ে রাখতো এই ইমাম। সেইসঙ্গে ধর্ষণ ও বলাৎকারের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে পরবর্তী সময়েও একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করত সে।’
বলছিলেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম। রোববার (২১ জুলাই) রাতে একাধিক ধর্ষণ ও বলাৎকারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আলীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ইমাম ইদ্রিস আলীকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘এই ইমাম এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী যে, তাকে গ্রেফতার করে আনার সময় স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু যখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তার কুর্কমের প্রমাণসহ তুলে ধরা হয় তখন তারাই অবাক হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ চিৎকার করে কেঁদে বলেছে যে, কার পিছনে এতদিন নামাজ পড়েছিলাম আমরা!’
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ‘মসজিদে নামাজ পড়ানোর পাশাপাশি একটি মাদ্রাসাতেও শিক্ষকতা করত ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি এলাকায় প্রচার করতে থাকেন যে, তার কাছে জিন বন্দি আছে। জিন দিয়ে রোগ সারানো হয়। এমন তথ্য প্রচার হওয়ার পর এলাকার মহিলারা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য তার কাছে যেতে শুরু করে। আর এ সুযোগে চিকিৎসার জন্য আসা মহিলাদেরকে জিনের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করত এ ইমাম। আর সে ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করাতো অন্য সহযোগীদের দিয়ে। পরে সেই সহযোগীকে দিয়েও ধর্ষণ করাতো ইদ্রিস আহম্মেদ। এতে করে যে ভিডিও করছে সে আর বাহিরে কারও কাছে অভিযোগ করার সাহস পেত না। ’
সারওয়ার বিন কাশেম আরও বলেন, ‘ঠিক কয়জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেটির সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না পেলেও ৪-৫ জন নারীকে যে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে সেটির ভিডিও ইদ্রিস আহম্মেদের মোবাইলে পাওয়া গেছে। যদিও এসব নারীরা সামাজিক অবস্থান এ মানসম্মানের ভয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগ করার সাহস পাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষক ইদ্রিস দক্ষিণখানের স্থানীয় একটি মসজিদের পাশাপাশি ওই মসজিদের মাদরাসায়ও শিক্ষকতা করতেন। মাদ্রাসায় পড়তে আসা ১০/১২ বছরের কমপক্ষে ১২ জন শিশুকে সে বারংবার বলাৎকার করেছে। শুধু তাই নয়, ভিডিও ধারণ করে মাদরাসা ও মসজিদে থাকা তার খাদেমদেরকেও সে একাধিকবার বলাৎকার করেছে জিম্মি করে। ’
তাকে গ্রেফতারের পর সেসব খাদেমরা অকপটে তার কাছে জিম্মি হওয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছে বলে জানান তিনি। এমনকি মাদ্রাসার একাধিক বলৎকারের শিকার ছাত্রদের মধ্যে একজন ছাত্রকে গত ৫ বছর যাবৎ সে বলাৎকার করে আসছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে সে ঘুমাতো। তার সকল অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন করত। আর সেই অপকর্মের ভিডিওগুলো সে তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব নারী একবার তার অপকর্মের শিকার হওয়ার পর আর তার কাছে যেতে চাইত না তাদেরকে তিনি জিন দিয়ে ক্ষতি করাবেন বলে ভয় দেখিয়ে আবার ধর্ষণ করতেন। আবার যেসব শিশু বা শিক্ষার্থী তার নির্যাতনের পর আর পড়তে যেত না তাদের অভিবাবকদেকে ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদ বলত- যদি তারা না যায় তাহলে আর কখনও ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করতে পারবে না। জিন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন ভয় দেখানোর ওইসব শিশুকে ফের তার কাছে পড়তে পাঠানো হতো।’
ইদ্রিস আহম্মেদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ধর্ষক প্রত্যেকটি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। জিন নিয়ে সে যে প্রচারণা চালিয়েছে সেটার সত্যতাও শিকার করেছে।
তার সম্পর্কে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ‘অভিযুক্ত ইদ্রিস আহম্মেদের বাড়ি সিলেটে। সেখানকার একটি মাদরাসা থেকে সে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করে। এরপর সে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতি এবং পাশাপাশি একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানে একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হয়। সে প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছে।
গ্রেফতার ইদ্রিস আহম্মেদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান র্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার বিন কাশেম।
সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম