ঢাকামুখী বন্যা
২২ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৯
ঢাকা: দেশের মধ্যাঞ্চল ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে বন্যা। এরইমধ্যে বন্যার পানিতে রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদীগুলো ভরতে শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের সবকটি নদীর পানি ঢাকার দিকে আসবে বলে আগাম সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে বাংলাদেশের উজানে চীনের বন্যার পানি নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার, পুনবার্সনে পাশে থাকার ঘোষণা আ.লীগের
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে জানান, বাংলাদেশের বন্যায় চীনের পানির কোনো প্রভাব পড়বে না। চীনের পানি বাংলাদেশের নদ-নদীতে আসতে আসতে এর প্রভাব শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা ও ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ছাড়া অন্যসব নদীর পানি কমে আসবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে পানি বাড়বে। এছাড়া তিনি জানান, বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় ৪০ লাখের ও বেশি মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদী ছাড়া অন্য সব প্রধান নদীর পানি হ্রাস পাবে। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোয় পানি বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের আসাম ও পশ্চিম বঙ্গের উত্তরাঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদরে পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে গঙ্গা-পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি হ্রাস পাবে।
একারণে টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় একই রকম থাকতে পারে।
আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসে বন্যার সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাসকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র যমুনা নদীর পানি আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত কমতে পারে। পরবর্তীতে সামান্য বেড়ে স্থিতিশীল হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র যমুনা নদীর অববাহিকায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে আগামী সাতদিন বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এসব এলাকায় নদীর পানি কমে আবার সামান্য বাড়তে পারে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রথমে স্থিতিশীল হতে পারে এবং পরে কমতে পারে।
আপাতত গঙ্গা নদীর অববাহিকায় গোয়ালন্দ অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ, আরিচা, ভাগ্যকূলে পানি আগামী পাঁচদিনে বিপৎসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। তবে ঢাকার আশপাশের নদীর পানি এর মধ্যে বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আগামী ২৪ ঘণ্টার পুর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তারাঞ্চল অতিক্রম করে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মোটামুটি সক্রিয়, দেশের অন্যত্র কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পুর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যবেক্ষণ করে থাকে এমন সব নদীর ৩৫ পয়েন্টে পানি বেড়েছে। কমেছে ৫৩ পয়েন্টে। পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জে সুরমা, শেরপুর-সিলেট জেলার সীমান্তে কুশিয়ারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস, চাঁদপুরে মেঘনা, কুড়িগ্রামে ধরলা, গাইবান্ধায় ঘাঘট, চকরহিমপুরে করতোয়া, চিলমারী ও নুনখাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও আরিচায় যমুনা, বাঘাবাড়িতে আত্রাই, এলাশিনে ধলেশ্বরী, জামালপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র, গোয়ালন্দে, ভাগ্যকূলে ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদীতে। এসব নদীতে পানি সর্বোচ্চ ১ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারাবাংলা/এইচএ/এমআই