জামিন নাকচ, বাছির কারাগারে
২৩ জুলাই ২০১৯ ১৪:৫৪
ঢাকা: পুলিশের বিতর্কিত উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সংস্থাটির বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস তার জামিন আবেদন নাকচ করে এই আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে সাবেক এই দুদক কর্মকর্তাকে আদালতে আনা হয়। আদালতে বাছিরের পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন।
গতকাল (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম এলাকার একটি বাসা থেকে এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের পরিচালক মো. ফানাফিল্যা। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে গত ১৬ জুলাই তিনিই এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন।
দণ্ডবিধির ১৬১/১৬৫এ/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং আইন ২০১২–এর ৪(২) (৩) ধারায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, এনামুল বাছির তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ডিআইজি মিজানের থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন এবং সেই টাকার অবস্থান গোপন করেন আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি খন্দকার এনামুল বাছির দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট ও সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তাকে জামিন দেওয়া হলে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট এবং তদন্ত কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন।
এদিকে এক নারীকে জোর করে বিয়ে এবং নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে। এর চার মাস পরে তার অর্জিত সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন এনামুল বাছির।
মিজানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, এনামুল বাছির তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
ডিভিশান পাবেন এনামুল বাছির
বাছিরের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান, আদালত আদেশ দিয়েছেন এনামুল বাছির জেল কোড অনুযায়ী ভিডিশান পাবেন।
তারা আরও বলেন, ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। এনামুল বাছিরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অথচ সেই টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি। শুধু তাই নয়, এনামুল বাছিরের ২৮ বছরের কর্মজীবনে কেউ বলতে পারবে না তিনি ১০ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এখন তার সন্তানরাও আয় করেন। তাদের মাসিক আয় দুই লাখ টাকার বেশি। কাজেই ঘুষ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ডিআইজি মিজানের সঙ্গে কথপোকথনের যে ক্লিপটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, এক্সপার্ট মতামত নেওয়ার আগে বলা যাবে না সেটা বাছিরের কণ্ঠ কি না। শুরুতে কিন্তু ডিআইজি মিজান কোনো অভিযোগ করেননি। যখন এনামুল বাছির তদন্ত করতে শুরু করেন, তার পরে তিনি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন। কারণ তদন্ত শুরু হলে ডিআইজি মিজানের গোপন তথ্য বের হয়ে আসতো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই অডিও ক্লিপ ছাড়াও তাদের মধ্যে যে এসএমএস আদান-প্রদান হয়েছিল সেগুলো মামলার এভিডেন্স হিসেবে কাজে লাগবে। এছাড়া তিন দফায় তিনি ঘুষ নিয়েছেন অনেকে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছেন, প্রমাণও আমাদের হাতে এসেছে।