বেনাপোলে হচ্ছে কার্গো টার্মিনাল
২৪ জুলাই ২০১৯ ০৮:০০
ঢাকা: প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা আনতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী গাড়ি সংরক্ষণ ও আমদানি-রফতানি কাজে গতিশীলতা আসবে এবং স্থলবন্দরসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ডিপিপিটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে ২৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত। এছাড়া ৫৮০ কিলোমিটার সমুদ্রসীমানা দ্বারা বেষ্টিত। ভারত সীমান্তে স্থলপথে আমদানি-রফতানি তথা বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। এ বন্দর ব্যবহার করে স্থলপথে প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। প্রতিবছর এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এখান থেকে প্রতিবছর প্রত্যক্ষভাবে সরকারের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবং ৫০০-৬০০টি বাংলাদেশি ট্রাক বন্দরে আসে। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে আসার পর তা টার্মিনালে অবস্থান করার কথা। কিন্তু বেনাপোলে ব্যবহারযোগ্য কোনো টার্মিনাল না থাকায় অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক সড়কের ওপর পার্কিং করে। স্থান সংকুলান ও অবকাঠামো স্বল্পতার কারণে বন্দরের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে অ্যাপ্রোচ রাস্তাসহ একটি কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ করা প্রয়োজন। টার্মিনালটি নির্মাণ করা হলে প্রায় ১ হাজার ২৫০টি যানবাহন পার্কিং সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২৯ দশমিক ১০ একর জমি অধিগ্রহণ, ২ লাখ ৪৫৬ হাজার ৯৭ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ২১০০ মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৬ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ড, ১ হাজার ৭৪৭ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, ৩টি টয়লেট কমপ্লেক্স ও ২টি মেইন গেইট, ২টি গেইট হাউজ ও সিকিউরিটি সিস্টেম, ৪টি ওয়াচ টাওয়ার এবং ১ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগত পণ্যবাহী গাড়ি সংরক্ষণ ও আমদানি-রফতানি কাজে গতিশীলতা আসবে। বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় বাড়বে। ভারতের সঙ্গে স্থলবাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ বন্দর ব্যবহারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে বন্দরটি। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম/একে