মশা দিয়ে ‘মশা নিধন’ সম্ভব হয়েছে যেভাবে
২৬ জুলাই ২০১৯ ১৫:৩৫
মশা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য,
- পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মশা প্রজাতি রয়েছে।
- পুরুষ ও স্ত্রী উভয় মশাই পানি, ফল ও ফুলের মধু খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। তবে স্ত্রী মশা তার ডিমের পুষ্টির জন্য শোষণ করে রক্ত।
- একটি মশা তার তিনগুণ ওজনের সমান রক্ত শোষণ করতে পারে।
- জীবন চক্রে পুরুষ মশা বাঁচে ১০ দিনের মতো, উপযুক্ত পরিবেশে স্ত্রী মশা বাঁচে ৬-৮ সপ্তাহ। তবে শীতযাপনের সময় ৬ মাসও এদের বেঁচে থাকা সম্ভব।
- এডিস মশা দিনে কামড়ায়।
প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘাতক প্রাণী ‘মশা’। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকা, চিকনগুনিয়াসহ মারাত্মক সব ব্যাধির প্রাদুর্ভাবে রয়েছে মশার ভূমিকা। মশা নিধনে কীটনাশক ও ধোঁয়া ছড়ানোর কিছু সনাতন পদ্ধতি থাকলেও এগুলো এখন আর তেমন কার্যকরী নয়। একেক প্রজাতির মশা একেক রকম প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তবে সম্প্রতি বিখ্যাত নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে জানা গেছে, চীন মশা নিধনে অতি-আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। নতুন উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে চীনের গোয়াংজু প্রদেশের দুটি দ্বীপে শতকরা ৯৫ ভাগের ওপরে মশা নিধন সম্ভব হয়েছে। প্রাণঘাতী কুখ্যাত সব মশা থেকে বাঁচতে ল্যাবে ‘চাষ করা মশা’ দিয়েই জঙ্গলের মশার সংখ্যার কমানোর বুদ্ধি বের করেছে চীন।
নতুন এই পদ্ধতিতে মশা নির্মূল করতে ল্যাবের সহযোগিতা প্রয়োজন। ল্যাবেই বড় করা হয় থাকে মশা। তারপর পুরুষ মশা ও স্ত্রী মশা আলাদা করা হয়। এদের থেরাপি দেওয়া হয় বা শারীরিক পরিবর্তন আনা হয়। এক্ষেত্রে পুরুষ মশাকেই হতে হয় বলি! রেডিয়েশন ও ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে এদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট বা দুর্বল করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় নির্ধারিত জঙ্গলে। তখন আর স্ত্রী মশাগুলোর বংশবিস্তার সম্ভব হয়না। এই উপায় সম্পর্কে নেচার সাময়িকীতে জানানো হয়েছে, ল্যাবে পালন করা মশার ওপরে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ পরিশ্রমসাধ্য, তবে উপযোগী।
গবেষকরা আরও বলেছেন, মশা নির্মূলে নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি আশা জাগালেও তা প্রয়োগ করতে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রেডিয়েশন প্রয়োগের ফলে অনেক পুরুষ মশাই স্ত্রী মশার সঙ্গে যৌন মিলনের আগেই মারা যায়। তাই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য উপায়। তবে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় মশাকেই কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত করা হলে তাদের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া মশারা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে। তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় মশা নির্মূলে হেক্টর প্রতি বছরে খরচ হবে বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৯ হাজার ১শ ১৯ টাকা। যেকোনো স্থানে মশার হার কমিয়ে আনা সম্ভব ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। চীনের ক্ষেত্রে দ্বীপ দুটির কিছু অঞ্চল প্রায় ১৩ সপ্তাহ মশা ঝুঁকি-মুক্ত ছিলো নতুন এ পদ্ধতির কারণে।
সারাবাংলা/এনএইচ