Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ধীরগতি


২৮ জুলাই ২০১৯ ০৮:৪৫

ঢাকা: প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়োগে দেরি, দরপত্র আহ্বান ও পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ধীর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু দুর্বল দিক থাকায় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে নির্মাণ কাজ। ফলে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পটির বাস্তবায়ন।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্প পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতিবছর এই দেশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৩টি জেলা এবং ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা হিসাবে আরও ৩টি জেলাসহ মোট ১৬টি জেলার ৮৬টি উপজেলায় আরও ২২০টি বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে  ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটি। কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়ায় আরও অন্তত একবছর সময় বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছে আইএমইডি।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় মোট ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা, আরসিসি অ্যাপ্রোচ তৈরি, সাইট উন্নয়ন ও ক্যাটেল শেল্টার তৈরি, গভীর নলকূপ স্থাপন, অফগ্রিড সোলার প্যানেল সিস্টেম এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নির্মাণের কাজগুলো সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রকল্পটির অনুকুলে গত ৩১ মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৮ কোটি টাকা অবমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু খরচ হয়েছে ২৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং অবমুক্ত অর্থের ৮৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অবমুক্ত অর্থের মধ্যে খরচ করা সম্ভব হয়নি ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২১৯টির কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে ১১০টির তৃতীয় তলা, ৩০টির দ্বিতীয় তলা, ৪০টির প্রথম তলার ছাদ ঢালাই এবং ৩৯টির পাইলিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ের ১০০টির করে সংযোগ সড়ক ও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রের ১৮৫টি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ২২০টি সোলার প্যানেল ও ১৮৬টি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান এখনও প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১২০টি গবাদিপশুর আশ্রয়ছাউনি নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের ধীর অগ্রগতির কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তাদের নিয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প শুরুর ৩ মাস পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রের টোপোগ্রাফিকস সার্ভে, মৃত্তিকা পরীক্ষা, স্ট্রাকচারাল ড্রোয়িং এন্ড স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ডিটেইলস ইস্টিমেট, টেন্ডার ডুকুমেন্টস ইত্যাদি তৈরির জন্য পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ এবং পরামর্শক কাজ শেষ করতে ৮ মাস বেশি সময় ব্যয় হয়েছে। সেই সঙ্গে ই-জিপি পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করায় প্রকল্পের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ, দরপত্র আহবান এবং মূল্যায়ন কার্যক্রমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ায়  প্রকল্পে ধীরগতি বিরাজ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করার প্রস্তাব রয়েছে। সংশোধনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডিপিপিতে প্রতিটির ডিপ টিউবওয়েল এক কোটি ৫০ লাখ টাকা থাকলেও কমপক্ষে দুই কোটি ৫০ লাখ ৩ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। প্রতিটি গবাদি পশুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা করে মোট ২৩ কোটি এক লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু ডিপিপিতে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে।

অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় ৭টি পণ্য, ৮টি কার্য ও একটি সেবা প্যাকেজ ক্রয়ের পরিকল্পনা ছিল। ডিপিপির পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ক্রয় দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে সবগুলো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ক্রয় পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে ২২০টি প্যাকেজের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৭ সালে যে ১৪৮টি দরপত্র আহ্হবানের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর ক্ষেত্রে ডিপিপি অনুযায়ী নির্ধারিত টেন্ডার আহবানের তারিখ থেকে বাস্তব টেন্ডার আহবান ৪ থেকে ১৬ মাস পর সম্পন্ন হয়েছে।

আবার ২০১৮ সালে যে ৭২টি দরপত্র আহবানের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর ক্ষেত্রে  ডিপিপি অনুযায়ী নির্ধারিত টেন্ডার আহবানের তারিখ থেকে ১৮ থেকে ২৪ মাস পর টেন্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। দরপত্রগুলো ই-জিপি পদ্ধতিতে আহবান করা হয়েছে। কোনো কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের নির্ধারিত স্পেসিফিকেশন ও পরীক্ষিত উপকরণের পরিবর্তে নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, বালু, খোয়া ব্যবহার করেছে। প্রকল্পের ডিপিপি ২০১৪ সালের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হওয়ায় কোনো কোনো কম্পোনেন্ট যেমন- সোলার প্যানেল, গভীর নলকূপ, ক্যাটেল শেল্টার, অ্যাপ্রোচ রোড বর্তমান বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে। এসব কারণেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে।

প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মতামত থেকে জানা যায় যে, ডিজাইনে র‌্যাম্পের ওপরে কোনো ছাদের ব্যবস্থা নেই। বর্ষাকালে র‌্যাম্প পিচ্ছিল হলে এর ব্যবহার ব্যহত হতে পারে। এছাড়া বজ্রপাত প্রতিরোধের পরিধি ডিজাইনে যেখানে শূন্য দশমিক ৫ কিলোমিটার রয়েছে, সেখানে ২ কিলোমিটার করার এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন নির্বাপন ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মতামত পাওয়া যায়।

এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে আইএমইডির’র সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে আমরা যেসব বিষয় তুলে ধরে সুপারিশ করেছি সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তবে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা আইএমইডির পক্ষ থেকে তা মনিটরিং করা হবে।’

আশ্রয়কেন্দ্র ঘূর্ণিঝড় দরপত্র পরিকল্পনা কমিশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর