ঘণ্টায় একজন ডেঙ্গু রোগী আসছেন কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে
২৮ জুলাই ২০১৯ ২৩:২৭
ঢাকা: রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রতি একঘণ্টায় একজন করে ডেঙ্গু রোগী আসছেন। তাদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে। এরই মধ্যে সিটের অভাবে অনেক রোগীকেই জায়গা দিতে পারছে না হাসপাতালটি।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে কথা হয় হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তানিয়া শিখার সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রোববার সকাল থেকে অনেক রোগী এসেছেন। বেড না থাকায় তাদের বেশিরভাগকেই ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আজ সারাদিন ও রাতে কী পরিমাণ রোগী এসেছেন বা ভর্তি হয়েছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে আগামীকাল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শনিবার (২৭ জুলাই) হাসপাতালটিতে ৯৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দিন ভর্তি হয়েছেন ৭৮ জন।
ডা. তানিয়া বলেন, আমরা আর রোগী নিতে পারছি না। অনেককে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের স্টাফরা হিসাব করে দেখেছেন, প্রতি এক ঘণ্টায় একজন করে রোগী ভর্তির জন্য আসছেন। কেবিন, ওয়ার্ড কোনোটাই ফাঁকা নেই। এমনকি যেখানে যেখানে বেড তৈরি করা যায়, সম্ভাব্য সব জায়গাতে রোগী রাখা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের মতিঝিল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে পাঁচটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি গাইনি ওয়ার্ড। চারটি ওয়ার্ডের একটিতেও সিট খালি নেই। রোগীদের ৯৫ ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্ত। গতকাল রোগী এসেছেন ১০৩ জন। এর মধ্যে ৮০ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। বাকিদের সেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে অন্য কোথাও ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের মতিঝিল শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক হাসমত আলী বলেন, রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। অনেকের টাকা নেই, এরপরও আমরা ভর্তি নিচ্ছি। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে চলে আসছে। ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে— এমন তথ্যে আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
মতিঝিল শাখার চিকিৎসক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার তো ডেঙ্গুকে কয়েকজন চিকিৎসকও মারা গেছেন। চিকিৎসকদেরও যে ডেঙ্গু হবে না, তা তো নয়। তবে আমরা রাত-দিন পরিশ্রম করছি, তবু ডিউটি শেষ হচ্ছে না। দিন শেষে আমরাও মানুষ। আমাদেরও পরিবার আছে, তাদেরও দেখতে হয়।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের মুগদা শাখায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন মোট ৫১ জন। এর মধ্যে রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ২১ জন। এর আগে শনিবার ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন। বাকিরা ভর্তি হয়েছেন এরও আগে। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাবাসসুম বিনতে মাহিয়া জানান, রোগীদের মধ্যে নারী ১২ জন ও শিশু রয়েছে ১৫ জন।
এদিকে, রাজধানীর স্বামীবাগ জাহাঙ্গীরনগর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে শনিবার (২৭ জুলাই) ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন আট জন। আর রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন তিন জন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক শরীফ হাসান বলেন, আজ দু’জন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ভর্তি থাকবেন আরও ছয় জন। যেভাবে ডেঙ্গুর কথা শুনছি, তাতে আরও রোগী আসতে পারে।
রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশে সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের ম্যানেজার আরজত আলী মণ্ডল বলেন, এখানে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে মোট ১৯ জন। এর মধ্যে গতকাল (শনিবার) ভর্তি হয়েছে সাত জন, শুক্রবার ভর্তি হয়েছেন আরও পাঁচ জন। আর রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন সাত জন।
রাজধানীর সূত্রাপুর ক্যাপিটাল হাসপাতালের ম্যানেজার ইমরান হাসান বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে রোববার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন পাঁচ জন। বাকিরা সবাই শনিবার ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিল শাখার চিকিৎসক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হয়। ডাবের পানি ও শরবতসহ বিভিন্ন ধরনের পানীয় বেশি বেশি খাওয়াতে হয়। গরীব রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এগুলো করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
ডেঙ্গুতে সতর্কতা বিষয়ে এই চিকিৎসক আরও বলেন, বৃষ্টি তো থামছে না। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পানি জমতে পারে, এমন কোনো জায়গা রাখা যাবে না। তবেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।