Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এক বছরেও মেয়ে হত্যার বিচার পাইনি, এখনো সড়কে নৈরাজ্য’


২৯ জুলাই ২০১৯ ১৬:০৩

ঢাকা: দেখতে দেখতে  এক বছর পার হয়ে গেলো তবুও মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই জানি না, কি হবে। মেয়ের প্রাণ গেলেও এখনো সড়কে চলছে একই রকম নৈরাজ্য। আমার মেয়েকে যারা মেরে ফেলল তাদের উপযুক্ত সাজা চাই।

সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন, দিয়া-রাজীব হত্যা মামলার বাদী ও নিহত শিক্ষার্থী দিয়ার বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর ওই চালকের ভারি যানের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। ফলে একটি যাত্রীবাহী বাস কিভাবে চালাতে হবে সে বিষয়ে তার কোনো দক্ষতাও ছিল না। এখনো টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ না দিয়েই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। আর বাস মালিকেরাও তাদের গাড়িটি যাচাই-বাছাই না করেই একজন অদক্ষ ড্রাইভারের হাতে তুলে দিচ্ছেন। যে কারণে সড়কে দুর্ঘটনাও বেশি ঘটছে। দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেলো মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না।

তিনি  বলেন, গত ২০-২৫ বছর গাড়ী চালিয়েছি। নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে গাড়ি চালিয়েছি। এভাবে কারও সন্তানের জীবন কেড়ে নেয়নি। অথচ আল্লাহ আমার সন্তানকে নিয়ে নিলেন। মেয়ের মৃত্যুর পর পেশাটায় ছেড়ে দিয়েছি। খেয়াল করে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা কম ঘটে। নতুন লাইসেন্সধারীরা বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায়। আমাদের দেশে গাড়ী আছে , চালক নাই। মালিকরা পরীক্ষা না করেই তাদের কাছে গাড়ী দিয়ে দেন। যেখানে হালক যানবাহন চালানোর লাইসেন্স থাকে, সেখানে তারা বড় গাড়ি চালাতে যায়। এর এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে নজর রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এখনও দিয়ার মা মৃত্যু শোক কাটাতে পারেনি। ওর মা যেভাবে কাঁদছে, আর কোনো মা যেন আর এভাবে না কাঁদে। ড্রাইভার যদি একটু সাবধানে গাড়ি চালাতো তাহলে আজ আমাদের পরিবারের কাউকে এভাবে কান্না করতে হতো না।আমাদের মত আর কেই যেন সন্তান হারা না হয়।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীবের মৃত্যুর পর রাস্তায় নামে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনার  রাতেই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করেন। এরপর ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাস নাগাদ মামলাটির বিচারকাজ শেষ করার প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলামকে জেরা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আগামী ২২ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষে আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সারাবাংলাকে জানান, দিয়া ও রাজীব হত্যার মামলাটিতে সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। মামলাটির বিচারকাজ এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে এবং করছে যেন মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ হয়। বিচারকাজ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। বর্তমানে ৩৭ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর কাজী শরিফুল ইসলাম ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ।

এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন বাসটির চাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যায়। আসামিদের মধ্যে কাজী আসাদ ও জাহাঙ্গীর আলম পলাতক। বাকি চারজন কারাগারে। এর আগে আসামিদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন, মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামি জোবায়ের সুমন ও মাছুম বিল্লাহ হালকা যান কার, জীপ ও মাইক্রোবাস চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক থাকলেও ৪১ সিটের বাস চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।

দিয়া হত্যা রমিজউদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর