Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে এনবিআরের বকেয়া শতকোটি টাকা


৩০ জুলাই ২০১৯ ০৯:১৫

ঢাকা: পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের বিনিময়ে প্রাপ্ত ফি হিসেবে পাওয়া অর্থের ওপর ভ্যাট বাবদ ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২ হাজার ৪১৬ টাকা বকেয়া হয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতরের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট তাদের কাছ থেকে এই অর্থ পাওনা আছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্র বলছে, ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার চলতি বছরের ৪ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে সরকারি কোষাগারে বকেয়া রাজস্ব জমা দিতে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন ফি থেকে পাওয়া অর্থের ওপর অপরিশোধিত মূসক (ভ্যাট) ৭৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৪ টাকা। এছাড়া ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ সুদ হারে ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত সুদ ৩৩ কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫২ টাকা। সব মিলিয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে বকেয়ার পরিমাণ মোট ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২ হাজার ৪১৬ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এই বকেয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে অনুরোধ জানায় ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, পাসপোর্ট অধিদফতর ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন ফি বাবদ অর্থ আদায় করেছে ৬১৫ কোটি ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৮২ টাকা। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী আদায় করা এই অর্থের পুরোটা মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা নয়। তফসিল অনুযায়ী এই অর্থের মধ্যে ৫৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ২৮ টাকা মূসক আরোপযোগ্য। আর প্রযোজ্য মূসকের পরিমাণ ৮০ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৪ টাকা ২ পয়সা।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাসপোর্ট অধিদফতর মূসক পরিশোধ করেছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৯৯০ টাকা। ফলে তাদের অপরিশোধিত মূসক তথা ভ্যাটের পরিমাণ ৭৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৪ টাকা। এর সাথে প্রতি মাসে ২ শতাংশ সুদও আদায়যোগ্য।

শুধু তাই নয়, পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট থেকে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে নোটিশের জবাব পাঠানো হয়। জবাবে পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, যাদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, তাদের ডেকে এনে মূসক আদায় বাস্তবসম্মত নয়।

এদিকে, চলতি বছরের ২৭ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীনকে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট থেকে চিঠি দিয়ে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বাজেট বরাদ্দ দিতে অনুরোধ করা হয়। একইসঙ্গে কন্ট্রা-এন্ট্রির (বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট) মাধ্যমে অপরিশোধিত মূসক পরিশোধের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিতে প্রয়োজনীয় নেওয়ার অনুরোধ করা হয় তাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, সেবা সরবরাহের বিপরীতে পাওয়া অর্থের মধ্যেই সেবার খরচ ও প্রযোজ্য ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা সেবাদাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট থেকে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে বকেয়া অর্থ আদায়ে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়।

ড. মইনুল বলেন, দাবিনামা জারি করলেও বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের জন্য পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ কারণে পাসপোর্ট অধিদফতরের বকেয়া ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ ২ হাজার ৪১৬ টাকা অনাদায়ী হিসেবে জের চলছে। আর এটা যেহেতু আদায়যোগ্য, তাই পাসপোর্টকে তাদের বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করতেই হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল হোসেন খান বলেন, এনবিআরে যে বকেয়া রয়েছে, সেটার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান খুব দ্রুতই হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, পাসপোর্টের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি অচিরেই বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান হবে। যেহেতু পাসপোর্ট অধিদফতর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই বকেয়া রাজস্ব আদায় না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাসপোর্ট অধিদফতর ভ্যাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর