Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গরু মোটাতাজায় দেশীয় পদ্ধতিতেই ভরসা ভৈরবের খামারিদের


১ আগস্ট ২০১৯ ০৯:০১

কিশোরগঞ্জ: কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে ভৈরবে সরকারিভাবে খামারগুলোতে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখানকার খামারিরা দেশীয় পদ্বতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের দাবি, এবার পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে। ফলে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে আসছে ঈদে পশুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খামারিরা। এজন্য চোরাই পথে পশু আমদানি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ভৈরবের সাতটি ইউনিয়নে দুই হাজার ৭৫০টি খামারে এবং কৃষকেরা ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রেখেছে ১০ হাজার ২৬২টি গবাদিপশু। বর্তমানে পশুগুলোর তদারকি আরও নিবিড় করা হয়েছে। খামারিরা গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে যেন ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে। এজন্য গঠন করা হয়েছে দুই সদস্যবিশিষ্ট সাতটি তদারকি টিম। এই টিমের সদস্যরা প্রতিদিন খামার পরিদর্শনে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

খামারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহর কিংবা গ্রাম পর্যায়ের খামারে গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এর আগের বছরগুলোতে অতি মুনাফালোভী কিছু অসাধু খামারি ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করলেও এবার প্রাণি সম্পদ অফিসের নজরদারি থাকায় তা করতে পারছে না। সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, তাজা ঘাস ও ভূষিসহ পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শে পশুগুলোকে কৃমি, ভিটামিন ও বিভিন্ন রোগের ওষুধ খাওয়ানো হলেও ক্ষতিকর ওষুধ দিচ্ছেন না খামারিরা।

শহরের নিউটাউনে অবস্থিত রুজেন ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, দেশীয় পদ্বতিতে গরু মোটাতাজাকরণে খামারিরা পশুগুলোকে ভাতের মাড়, খৈল, ভূষি, কুড়া ও পাকচং ঘাস খাওয়াচ্ছে। আর এতেই কোরবানির জন্য পশু কিনতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রেতা গরুর দাম হাকঁছেন। ওই খামারে ৪৫টি দেশি ষাঁড় রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্য থেকে ‘রাজা’ নামের একটি ষাঁড়ের দাম হাঁকা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা । কয়েকজন ক্রেতা জানালেন খামারি আশরাফুল আলম রুজেন ষাঁড়টির দাম হেকেঁছিলেন সাত লাখ টাকা ।

এ বিষয়ে আশরাফুল আলম রুজেন জানান, ২০ বছর ধরে তিনি গরুর খামার করছেন। প্রতি বছরই তিনি দেশীয় পদ্বতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করেন। এ বছরও তিনি খামারের গাভির বাছুর থেকে ৪৫টি ষাঁড় দেশীয় পদ্বতিতে লালন-পালন করছেন। এরই মধ্যে অনেক ক্রেতা তার খামারে এসে ষাঁড়গুলো দেখে আকৃষ্ট হয়েছেন। অনেকেই ‘রাজা’ নামের ষাঁড়টি কেনার জন্য পছন্দ করেছেন। কেউ কেউ রাজার দাম হাঁকছেন পাঁচ লাখ টাকা। তবে তিনি রাজাকে ছয় লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, ‘প্রাণি সম্পদ অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে খামারিরা দেশীয় পদ্বতিতে গরু মোটাতাজা করছে। এর আগের বছরগুলোতে খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণে যে ধরনের স্টেরয়েড ও হরমন ব্যবহার করতো, এ বছর তা হচ্ছে না। কারণ আমরা অফিস থেকে সাতটি টিম গঠন করেছি। টিমগুলো ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদারকি করছে এবং বিভিন্ন দোকান ও ফার্মেসিতে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও খামারিদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো বুঝানোর চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস এবার কোনো খামারেই ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে না।’

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, যেসব পশুকে পাম ট্যাবলেট, ডেক্সা মেথাথন ও স্টেরয়েড বা ওরাল খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়, সেগুলোর মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ওই মাংস খেলে চোখের দৃষ্টি কমে যায়, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়- এমনকি শরীরে পানি এসে হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই খামারি ও কৃষকদের কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ থেকে বিরত থাকা উচিত।

এদিকে খামারিদের দাবি, বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি। তাই বিদেশি পশু যেন আমদানি করা না হয়। বিদেশি পশু আমদানি করা হলে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। এছাড়া সরকার যেন চোরাই পথে পশু আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

গরু মোটাতাজাকরণ প্রাণি সম্পদ অফিস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর