সিরাজগঞ্জের রাজাবাবু ‘৪৫ মণ’, দাম ১৫ লাখ
৩ আগস্ট ২০১৯ ১০:০১
সিরাজগঞ্জ: এবারের কোরবানির ঈদে যেসব গরু হাট কাঁপাবে বলে ভাবা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের রাজাবাবু সেগুলোর একটি। তিন বছর বয়সী ষাঁড় রাজাবাবুর ওজন ৪৫ মণ। দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ। রাজাবাবুর মালিক মানিক ব্যাপারী (৫৫) জানান, গরুটি ঈদের সপ্তাহখানেক আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা কোরবানির পশুর হাটে তোলা হবে।
সাদা-কালোর মিশেলে তাগড়া এই ষাঁড়টি দেখতে ইতোমধ্যে দর্শনার্থীরা শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের জামিরতা গ্রামে ভিড় করছেন। এ ভিড় সামাল দিতে মানিক ব্যাপারী ৭ হাজার টাকা বেতনে ২ জন পাহারাদার ও পরিচর্যাকারী নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের একজন রতন সরকার। তিনি বলেন, প্রতিদিন লোকসমাগম সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাট কাঁপাবে ‘খোকাবাবু ১ টন’, দাম ১৫ লাখ
রাজাবাবুর যত্ন বিষয়ে জানতে চাইলে রতন জানান, রাজাবাবুর স্পেশাল কেয়ার নেওয়া হয়। কারণ এই গরুর ওজন-আকার অন্য সাধারণ গরুর চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। তাই একে সম্পূর্ণ সুষম খাদ্য যেমন, কাঁচা ঘাস, তিল ও সরিষার খইল, ছোলা, গম ও ভুট্টার ভুষি, ভাতের মার ও ভাল মানের খড় খাওয়ানো হয়।
এছাড়া প্রতিদিন সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয় রাজাবাবুকে। রাতে কয়েল জ্বালানো হয়। রাখা হয় মশারির মধ্যে। সব রকমের যত্ন নেওয়া হয়, যাতে কোনো রকম রোগ-জীবাণুতে গরুটিকে আক্রান্ত না হয়।
রাজাবাবুকে দেখতে এসেছিলেন কাশিপুর গ্রামের স্কুলছাত্র শাকিল রানা। সে জানায়, স্কুলে এসে রাজাবাবুর কথা শুনে টিফিন ব্রেকে গরুটিকে দেখতে এসেছে। সে এর আগে এতো বড় ষাঁড় দেখেনি।
একই স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল ইসলাম সুমন, আশিকুল ইসলাম ও রাকিবুল ইসলাম অরণ্য জানায়, তাদেরও এলাকায় এটাই সবচেয়ে বড় আকারের ষাঁড় গরু। তাই প্রায় প্রতিদিনই টিফিনের ফাঁকে গরুটিকে একনজর দেখতে আসে তারা।
গরুর মালিক মানিক ব্যাপারী রাজাবাবু সম্পর্কে বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে গরু লালন-পালন করছি। প্রতিবছর কোরবানির হাটে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০-৪৫টি করে গরু বিক্রি করি। এগুলোর দাম দুই-আড়াই লাখ থেকে চার-সাড়ে চার লাখের মধ্যে থাকে। এবারই প্রথম ৪৫ মণ ওজনের রাজাবাবুকে ফতুল্লার হাটে তুলতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মানিক ব্যাপারী আরও বলেন, এরই মধ্যে বাড়িতে এসে একাধিক ক্রেতা ১০ লাখ টাকা দাম বলেছে। কিন্তু আমি সর্বশেষ ১৫ লাখ টাকা বলে দিয়েছি। যদি এ দামে কেউ আগ্রহী হয়, তাহলে এখানেই বিক্রি করব। তা না হলে ঈদের ১ সপ্তাহ আগে ফতুল্লার কোরবানির হাটে নিয়ে যাব। সেখানে এই দামে আমার পরিচিত অনেক ক্রেতা রয়েছে। আশাকরি চাওয়া বিক্রি করতে পারব।
এতো বড় বিশাল ষাঁড়টি কীভাবে ফতুল্লার হাটে নেবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌপথে নেওয়া হবে। এরইমধ্যে ৩৫ হাজার টাকায় বড় আকারের ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা ভাড়া করেছি। সেটাতে করেই নিয়ে যাব।
মানিক ব্যাপারীর মেঝ ছেলে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র শাওন আহমেদ জানায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই সে সার্বক্ষণিক রাজাবাবুর কাছেই থাকে। সে গরুটিকে খুব ভালবাসে। নিজ হাতে খড় ও ঘাস খাওয়ায়। গরুটিও তাকে খুব পছন্দ করে। সে কাছে গেলে গুঁতো দেয় না। খুব শান্ত ভাবে তার কাছে থাকে। গলা এগিয়ে দেয়।
মানিক ব্যাপারীর স্ত্রী বিলকিস পারভীন বলেন, গরুটি যেন আমাদের পরিবারের একজন। সে আমার সন্তানের মতই আদরে বেড়ে উঠেছে। বিক্রি করতে মন চায় না। কিন্তু এতো বড় ভারি গরু রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এর যত্ন ও পরিচর্যায় ২ জন লোক লাগে। তাদের সার্বক্ষণিক ওর পেছনে কাজ করতে হয়। এতে ওর পিছনে খরচও বেড়ে গেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার বিক্রি করে দেব।