Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় আ.লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম রিমান্ডে


৫ আগস্ট ২০১৯ ১৪:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ‘বিতর্কিত’ আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমান এই আদেশ দিয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুমকে ঢাকার বনানীর কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ-এর ব্লু ওশান টাওয়ারের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম। সোমবার সকাল ৭টার দিকে মাসুমকে নিয়ে পিবিআইর টিম চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাসুমকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় মাসুমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এই আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

তিনি জানান, আদালতে মাসুমের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। এছাড়া তার অসুস্থতার বিষয়টি তুলে ধরেন আইনজীবীরা। উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত থেকে মাসুমকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মাসুমকে আদালতে নেওয়ার সময় সেখানে হাজির হন তার অনুসারী কয়েকশ নেতাকর্মী। এসময় তারা আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেন। কয়েকজন নারী কর্মী সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। গত ১২ জুলাই মিজানুর রহমান নামে এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানায়, সুদীপ্ত খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ‘বড় ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম।

এরপর গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ থাকা দুটি অস্ত্রের (শটগান/৫৪৪৪/ডবলমুরিং ও পিস্তল/৩৩/খুলশী) লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে মাসুমকে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তাকে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া যুবলীগ নেতা রিপন ও মিজান এবং ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মোমিন ও মুজিব হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া মাসুমের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ আনেন কাউন্সিলর মানিক।

ওই আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিলপূর্বক জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ৩১ জুলাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্র দুটি জব্দের বিষয়ে চিঠি দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারকে। সিএমপির বিশেষ শাখার উপকমিশনার মো. আব্দুল ওয়ারিশ খান বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অস্ত্র দুটি জব্দের নির্দেশ দেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে দিদারুল আলম মাসুম নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দুটি জমা দেন। অবশ্য এর আগে শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে মাসুমের বাসায় অস্ত্র দুটি জব্দের জন্য গিয়েছিল পুলিশ। তবে অস্ত্র না পেয়ে তারা বাসায় নোটিশ দিয়ে আসেন। এতে বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই যেন অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়। অন্যথায় অবৈধ অস্ত্র হেফাজতে রাখার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দিদারুল আলম মাসুম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মাসুম লালখান বাজারের চানমারি রোডের ইপিক কামারপার্ক নামে একটি ভবনের বাসিন্দা আবদুল হকের ছেলে।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উত্থানের সময় চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মোড়ে দিদারুল আলমের অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আলোচনায় আসেন তিনি। লাইসেন্স বাতিল হওয়া দুটি অস্ত্রের মধ্যে একটি ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব প্রতিরোধের জন্য দিদারুল আলম মাসুম নগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের কাছে প্রশংসিতও হয়েছিলেন।

তবে এরপর থেকে লালখান বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের প্রতিপক্ষের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাত, কয়েকটি খুনের ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমে মাসুমের নাম উঠে আসে। একপর্যায়ে গণমাধ্যমে ‘বড় ভাইয়ের’ তকমাও পায় মাসুম। সবশেষ সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ‘বিতর্কিত’ নেতা হিসেবে পরিচিতি পায় দিদারুল আলম মাসুম।

আটক ছাত্রলীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর