কী থাকছে ভারতের সঙ্গে পানি বৈঠকে?
৫ আগস্ট ২০১৯ ২৩:১২
ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে বহমান অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর ঢাকা-নয়া দিল্লি সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট)। এ বৈঠকে পদ্মায় যৌথভাবে ব্যারাজ প্রকল্প, তিস্তার পানি বণ্টনসহ ফেনী, মানু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধ কুমার নদী বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল দুই প্রধানমন্ত্রী ৬২ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করেন। প্রকাশ করা ইশতেহারের ৪০ ও ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে উঠে আসে দুই দেশের পানি ব্যবস্থাপনার কথা। ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলা জানাচ্ছে, আসন্ন সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ইশতেহারে সম্মত হওয়া বিষয়গুলো নিয়েই আলাপ হবে। বিশেষ করে সেগুলোর ফলোআপ ও বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা হবে বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়।
ঢাকার কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ভারতের অনীহার কারণে দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ পানি ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করা যায়নি। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর ২০১৭ সালের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পানি সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় পক্ষ নিয়মিতভাবে বৈঠকে বসবেন। এরপর ঢাকা থেকে একাধিকবার তাগাদা দিলেও নয়া দিল্লির সাড়া মেলেনি। তবে এখন যে ভারত পানি নিয়ে বৈঠকের আগ্রহ দেখিয়েছে, সেটাকে ইতিবাচক মনে করছেন ঢাকার কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পানি বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ও ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিংসহ ভারতের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের ঢাকা আসার কথা রয়েছে।
ঢাকার কর্মকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, আসন্ন বৈঠকে অন্য বিষয়ের পাশাপাশি তিস্তা বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লির প্রতি চাপ থাকবে। ঢাকা এই বিষয়ে নয়া দিল্লির কাছে দ্রুত সমাধান চাইবে।
তবে ঢাকা চাইলেই এ বিষয়ে সহসাই সমাধান পাওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিস্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে খুব দ্রুত কোনো সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা দেখি না। কেননা, তিস্তার পানি পশ্চিমবঙ্গেরও ওপরে সিকিম থেকে নামে। আমি সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখেছি, সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রিও ছিলেন। বিষয়টা হচ্ছে, সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গে পানি নামার আগেই জলপ্রবাহকে সিকিমের অনেকগুলো বাঁধ পেরোতে হয়। এতে করে পশ্চিমবঙ্গে যে পানি নামে তার পরিমাণ খুবই স্বল্প। তারপর সেই পানি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘তিস্তা ইস্যুতে আমরা সবসময়ই পশ্চিমবঙ্গের ওপর দোষ চাপাচ্ছি। কিন্তু মূল সমস্যা ওপরে, সিকিমে। এই পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হলে সিকিমের বাঁধ বিষয়ে সমাধান আগে করতে হবে।’
ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এখন থেকে তিস্তার পাশাপাশি গঙ্গা বিষয়েও আলাপ করতে হবে— এ বিষয়টি উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি হয়। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময়ে আমাদের পানির যে চাহিদা ছিল, আজ তার তিন গুণ চাহিদা বেড়েছে। এই গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করা প্রয়োজন। তা না হলে আমরা আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের পানির সংকটে পড়ব।’
গঙ্গা চুক্তি তিস্তা তিস্তা চুক্তি পানি চুক্তি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ে বৈঠক