গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কেপিএমে ফের উৎপাদন বন্ধ
৬ আগস্ট ২০১৯ ০৯:২৩
রাঙ্গামাটি: গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে ফের বন্ধ হয়ে পড়েছে কর্ণফুলী পেপার মিলসের (কেপিএম) উৎপাদন। গত রোববার দুপুরে মিলের গ্যাস লাইনের মিটারিং পার্টস বিকল হয়ে পড়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস সংযোগ সচল করা যাবে তা জানাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
কেপিএম সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর থেকে বন্ধ করেছে মিলের কাগজ উৎপাদন। এ অবস্থায় অলস সময় কাটাচ্ছেন কেপিএমের সাড়ে আটশ শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। মিলটিতে প্রতিদিন কাগজ উৎপাদনক্ষমতা ১৫ টন। উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন মিলসে ১৫-২০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কেপিএমকে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাগজের স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে বেগ পেতে হবে।
এর আগে, গত ২ জুলাই (মঙ্গলবার) রাত থেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কারণে আটদিন উৎপাদন বন্ধ থাকে দেশের সর্ববৃহৎ কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলসের (কেপিএম) উৎপাদন। এ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম পানি সংকটে ভোগেন আবাসিক এলাকায় বসবাসরত মানুষ।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় কেপিএম কর্তৃপক্ষ সমগ্র আবাসিক এলাকায় মাইকিং করে সকল কর্মজীবীদের জানিয়ে দেয়, গ্যাস সরবরাহ বন্ধকালীন কেউ কোনোভাবেই বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করতে পারবেন না। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার ইসলাম চৌধুরী বেবি জানান, রোববার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিকেল থেকেই মিলের নিজস্ব জেনাটেটারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কাগজ উৎপাদন বন্ধের পাশাপাশি আবাসিক এলাকাতেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, ‘কেপিএমের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য বেতন ভাতা বকেয়ার ঘটনা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ যান্ত্রিক ত্রুটির চিত্র একই। এর আগে, সপ্তাহখানেক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না থাকায় কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এসব বিষয় নিয়ে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য, বিসিআইসিসহ বিভিন্ন দফতরে জানানোর পাশাপাশি প্রায় সময় আইনশৃঙ্খলা সভায় কথাগুলো বলে যাচ্ছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা?’
কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এম এম এ কাদের বলেন, ‘রোববার দুপুরে কেপিএমে গ্যাস সরবরাহ লাইনের মিটারের একটি পার্টস নষ্ট হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমরা গ্যাস সরবরাহ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা একটি পরিদর্শক টিমও পাঠিয়েছে। কিন্তু পার্টসটি এখনও লাগিয়ে দিয়ে যায়নি।’
কেপিএমের এমডি বলেন, ‘বছরের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বই তুলে দেন। পাঠ্যপুস্তকের বইয়ের কাগজ আমরা সরবরাহ করি। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, হাইকোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আমরা কাগজ সরবরাহ করে থাকি। উৎপাদন বন্ধ থাকায় সে কাগজ সরবরাহে আমাদের বেশ বেগ পেতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘কেপিএম অবস্থিত মিটারিং পাটর্সটি প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো। আমরা গ্যাস সংযোগ চালুর চেষ্টা করছি। তবে কবেনাগাদ গ্যাস সংযোগ সচল হবে তা বলা যাচ্ছে না। যদি মেশিন নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বিদেশ থেকে আনা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই।’
উল্লেখ্য, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় ১৯৫৩ সালে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড স্থাপিত হয়। পাঁচ একর জমিতে এটি স্থাপন করে তৎকালীন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা। প্রতিষ্ঠার সময় মিলটির বার্ষিক কাগজ উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার টন।