আগেভাগেই পশুর হাট, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা
৬ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৫৯
ঢাকা: সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই রাজধানীতে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সড়ক ও নৌ পথে আসছে কোরবানির পশু। এতে অস্থায়ী হাট এলাকায় পশুবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আগামী ৮ আগস্ট থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির হাটের সময় নির্ধারণ করে দেয়। অথচ নিয়ম ভেঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগে হাট শুরু হওয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমাতে দুই সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরেজমিনে রাজধানীর হাট ঘুরে এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে আগেভাগে পশুর হাট এবং স্থানীয়দের ভোগান্তি সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত সম্পত্তি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘দু’একদিন আগে আসতেই পারে। এতে তো দোষের কিছু নেই। তারাও তো ব্যবসা করতে চায়। এখন মানবিক দিক থেকেও তো তাদেরকে সুযোগ দেয়া দরকার।’
তবে পশুর হাট বসানোর নিয়ম এবং কোনো অনিয়ম হলে কি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমি জানি না। তবে জেনে আপনাকে জানাতে হবে।
একই প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা সাবরিন রাসেল বলেন, ৮ আগস্ট থেকে কোরবানির কেনা-বেচা শুরু হবে। তার আগে হাটে পশু আনা এবং কেনাবেচা করার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমন কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কিছু বলেন নি।
দুই সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৪টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৯টিসহ রাজধানীতে মোট ২৩টি কোরবানির অস্থায়ী হাট বসবে। হাট প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া হয়েছে গত ৫ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিন। আর হাটে কোরবানির পশু আসা ও বেচাকেনার জন্য ৮ আগস্ট থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চারদিন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮ আগস্টের আগে পশুবাহী কোনো ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটে পশু আনার কোনো সুযোগ নেই। তবে আগেভাগে হাটে পশু আসার কোনো অভিযোগও পাননি উল্লেখ করে তারা জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োগ, আমদানি নিয়ে ব্যস্ত দুই সিটির কর্মকর্তারা। যে কারণে এ বছর কোরবানির পশুর হাটের উপর নজরদারি কম।
এদিকে, গত সোমবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সবকটি হাটে অবকাঠামোগত কাজ শেষ। অবকাঠামো তৈরিতে কোনো কোনো হাটে বাঁশের খুঁটি ও সামিয়ানার সঙ্গে বৃষ্টিতে থেকে পশুদের রক্ষা করতে ত্রিপল টানানো দেখা গেছে। হাটের নির্ধারিত জায়গায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য বানানো হয়েছে রঙিন গেট। পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে হাসিলঘর (ক্রেতা থেকে ইজারাদারদের অর্থ আদায়ের স্থান)। হাটের বাইরে ট্রাক থেকে কোরবানির পশু নামানোর জন্য খড়ের স্তুপ বসানো হয়েছে। হাটের ভেতরে বিভিন্ন প্রান্তে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয়েছে টয়লেট।
হাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত গত শুক্রবার থেকে হাটগুলোতে গরু আসা শুরু হয়। গত তিনদিনে কোরবানির পশু নিয়ে অনেক বেপারী এসেছেন। তারা জানান, এখনও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন বেপারি ও তাদের কর্মচারীরা। বেপারীদের কর্মচারিরা কেউ কেউ গরুর খাবার তৈরি করছেন। কেউ সৌন্দর্য বাড়াতে গরুর শিং ও লেজে সরিষা তেল মেখে দিচ্ছেন। অনেককে দেখা গেছে সময় কাটাতে লুডু খেলতে। এছাড়া হাটগুলোর বাইরে এরইমধ্যে পশু খাদ্য ভূষি, কুড়া, ঘাস নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি প্রতিটি হাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
রাজধানির লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, শ্যামপুর বালুর মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ, ধূপখোলা মাঠ ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠে বসানো অস্থায়ী পশুর হাটের প্রায় একইচিত্র।
হাটের ইজারাদারের লোকজন জানান, বেপারীরা ভালো জায়গা দখল করতে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটে চলে এসেছে পশু নিয়ে। এছাড়া কোরবানির জন্য চারদিন একেবারেই কম। আর বেপারীরা জানান, তাদের আসতে বলার পর তারা হাটে এসেছে। আগে আসলে মূল হাটে জায়গা পাওয়া যায়। এতে বেচা বিক্রি ভালো হয়।
দনিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি ট্রাক থেকে গরু নামানো হচ্ছে। এছাড়া আরও ৭টি গরু বোঝাই ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় আছে। শরীয়তপুর থেকে ১২টি গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে এসেছেন বেপারী আব্দুল সহিদ। তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে জানান, হাটের ইজারাদাররা আমাকে খবর দিয়েছে আসার জন্য। এখনো কাস্টমারের দেখা নাই। খড়-কুড়া খাওয়াচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি বিক্রি হবে ততই খড়-কুড়ার বাড়ি খরচ থেকে বেঁচে যামু। কোরবানির হাটে চারদিন বেঁচাকেনার নিয়ম সম্পর্কে জানে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এমন নিয়মের কথা আগে শুনি নাই। একই নিয়ম সম্পর্কে কিছুই জানেন না
ধোলাইপাড় হাটে এসেছেন বেপারী শফিক মিয়া। তিনি আগে আসার কারণ সম্পর্কে জানান, গতবার পটুয়াখালী থেকে গরু নিয়ে আসার সময় ফেরী ঘাটে সমস্যা ছিল। এতে দুইটা গরু মারাও গেছে। এবার তাই আগেই চলে আসলাম। এখন বিক্রি হইলেই বাঁচি। এই দুই হাটে ইজারাদারকে পাওয়া যায়নি। তাদের লোকজনও এই বিষয়ে কথা বলতে চায়নি।
পরে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রহমতগঞ্জ পশুর হাটের ইজারাদার হাজী শফি মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি আছে।
অন্যদিকে, আগেভাগে হাটগুলোতে কোরবানির পশু চলে আসার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শ্যামপুর বালুর মাঠ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জামাল সরকার জানান, আগেভাগে গরু আসায় গত তিনদিন ধরে এই এলাকায় ট্রাকের চাপে জ্যাম লেগে থাকে। এছাড়া গরুর হাটের বর্জ্যের কারণে বৃষ্টিতে রাস্তায় কাঁদা জমে নোংরা হয়ে গেছে। এছাড়া সবসময় এই হাটকে কেন্দ্র করে একটা জটলাতো সবসময়ই থাকে।
গরুর হাটের বর্জ্য রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ায় একই ভোগান্তির কথা জানান দনিয়া কলেজ সংলগ্ন এলাকার তরুণ বাসিন্দা অর্ক মাহমুদ।
আগেভাগে কোরবানির পশুর ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করায় অস্থায়ী হাট এলাকাগুলোতে যানজট সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশদের। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ হাটের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ রবিউল ইসলাম জানান, গত তিনদিন ধরে রাতদিন পশুবাহী ট্রাক আসছে। এতে যানজট বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে রাজধানীতে কোরবানির পশুবাহি ট্রাক প্রবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা নাই। তাই কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: সুমিত আহমেদ