নতুন সংযোগ লাইন বসাবে চট্টগ্রাম ওয়াসা, খোঁড়াখুঁড়ি এবার অলিগলিতে
২০ আগস্ট ২০১৯ ২২:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মূল সরবরাহ লাইন থেকে বাসাবাড়িতে সংযুক্ত প্রায় ৫০ হাজার পাইপ লাইন নতুনভাবে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে পুরনো ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন অপসারণ করে বসানো হবে নতুন সংযোগ লাইন। ওয়াসা জানিয়েছে, নতুন সংযোগ লাইন স্থাপনের জন্য তাদের নগরজুড়ে অলিগলি থেকে বাসাবাড়ির সামনের রাস্তা, ভবনের আশপাশও কাটতে হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন ধরে আমরা মূল পাইপ লাইন বসিয়েছি, যেগুলো সরাসরি পানি সরবরাহ কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত। এখন আমরা সংযোগ লাইনে হাত দিচ্ছি অর্থাৎ মূল পাইপ লাইন থেকে পানি যেসব লাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে পৌঁছে। আগামী নভেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এক বছর সময় লাগবে।’
পাইপ লাইনের বসাতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরী জুড়ে অব্যাহত খোঁড়াখুঁড়িতে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে আছে ওয়াসা। নগরীতে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িকে দায়ী করে আসছে পুলিশ। গত ২৪ জুলাই ভোগান্তির অভিযোগ নিয়ে ওয়াসার বোর্ড সভায় পরিচালকদের একাংশের তোপের মুখে পড়েছিলেন ফজলুল্লাহ।
এই অবস্থায় ফজলুল্লাহ জানিয়েছেন, নতুন সংযোগ লাইন স্থাপনের জন্য ওয়াসাকে আবারও খোঁড়াখুঁড়িতে নামতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খনন ছাড়া বিকল্প কি? আমি পাইপ লাইনগুলো কিভাবে নেব? আমাকে তো রাস্তা কাটতেই হবে। এবার মূল সড়কের বাইরে গলির ভেতরে, পাড়া-মহল্লায়, বাসার সামনেও কাটতে হবে। এই ভোগান্তি যদি নগরবাসী সহ্য করে ওয়াসাকে সহযোগিতা করেন, তাহলে ১০০ বছরে তাদের আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।’
জাইকার অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের অধীনেই নতুন সংযোগ লাইনগুলো স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এই কর্মকর্তা।
এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের পাশে চেয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত পরিষদের সভায় উপস্থিত হয়ে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা চান। এসময় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সভায় ছিলেন।
ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাউন্সিলরদের কাছে তাদের এলাকার সড়কের তালিকা চেয়েছি। এছাড়া নিজ নিজ এলাকায় পানি সরবরাহে কোনো সমস্যা আছে কি না সেটাও জানতে চেয়েছি। ৩০ আগস্টের মধ্যে তালিকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। যদি সম্মানিত কাউন্সিলররা ৩০ আগস্টের মধ্যে তালিকা দেন, তাহলে আমরাও প্রকল্পের কাজ সময়মতো শুরু করতে পারব। না হলে দেরি হয়ে যাবে।’
এদিকে সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা আছে। চট্টগ্রাম নগরীর অনেক এলাকায় এখনো ওয়াসার সংযোগ লাইন স্থাপিত হয়নি। আবার অনেক এলাকায় পাইপ লাইন থাকলেও পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা। প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ওয়াসা বারবার রাস্তা কাটছে। এতে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের কাজে ওয়াসা জনগণের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে চায়, এটা ইতিবাচক।’
মেয়র ওয়াসার চাহিদামতো ৩০ আগস্টের মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকার নতুন-পুরোনো সড়কের তালিকা ওয়াসাকে দেয়ার নির্দেশ দেন।
সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘নগরবাসীর শতভাগ পানির চাহিদা পূরণে ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে। ১০ বছর আগে ওয়াসার পানি সরবরাহ ছিল মাত্র ১২ কোটি লিটার। বর্তমানে নগরীতে প্রায় ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছর এই সরবরাহ আরো ১৪ কোটি লিটার বাড়বে। এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই গ্রাহকেরা আমাদের কাছে আসুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় কয়েকজন কাউন্সিলর ওয়াসার বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।