ঢাকা: বাংলাদেশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম আজ (বৃহস্পতিবার) স্বল্প আকারে হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। কিন্তু আমরা আশা ছাড়িনি। আমরা এখনো প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আশায় বুক বেঁধে আছি। আজকের বিষয়টি দুঃখজনক। পরবর্তী সময়ে কী করব, আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন- মিয়ানমারে ফিরে না গেলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে: মন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রক্রিয়া আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমরা আজকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আজ প্রক্রিয়াটি শুরু হলে ভালো, না হলে আমরা এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।
রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এই সংকটের সমাধান তাদের কাছেই— এমন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জোর করে কাউকে পাঠাব না। আমরা স্বেচ্ছায় নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। রোহিঙ্গা সংকটের মূলে আস্থার অভাব রয়েছে। এজন্য আমরা সবশেষ চতুর্থ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রস্তাব করেছিলাম, আস্থা তৈরির জন্য কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে যেসব রোহিঙ্গা মাঝি বা নেতারা রয়েছেন তাদের রাখাইন নিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হোক, যেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার যে অভাব আছে তা দূর হয়।’
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার জন্য শিবিরগুলোতে অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রচারণা চালাচ্ছে। চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ঢাকার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এখন চিন্তা করেছি, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য একটি কমিশন গঠন করব, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
আরও পড়ুন- ঘুমধুম ট্রানজিট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বাংলাদেশ
এর আগে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে মিয়ানমার এখনও রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। রোহিঙ্গাদের আচরণ পর্যবেক্ষণেও দেখা যায়, এদিনও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে না।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মিয়ানমার সরকার ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণায় অনেকটা তড়িঘড়ি করেই প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ২০ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য যানবাহন ও নিরাপত্তাসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রত্যাবাসন পর্যবেক্ষণের জন্য মিয়ানমার দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ও চীনা দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাও কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। কিন্তু রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের যেসব দাবি রয়েছে সেগুলো পূরণ না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না।
প্রত্যাবাসন নিয়ে এসব অনিশ্চয়তা বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে বেসরকারি বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গাদের উচিত নিজ দেশে ফেরত যাওয়া। ফেরত না গেলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।
ফাইল ছবি