Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ গঠন বিএনপির


২৩ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৩৬

ঢাকা: দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে নতুন একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছে বিএনপি।

নিপীড়িত-নির্যাতিত নারী ও শিশুদের আইনি ও চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত এ ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ফোরাম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান ও নিপুণরায় চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, ‘খুন-ধর্ষণের পৈশাচিক বিকৃতি আমাদের রাষ্ট্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি জনমনে গভীর উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। অভিভাবকরা মেয়ে ও শিশু সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ নেই বলেই সমাজবিরোধীরা ধর্ষণ-নিপীড়ণে উৎসাহিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুব্ধ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সামাজিক এই অধ:পতনের সময় নির্বিকার বসে থাকতে পারে না।’

বাংলাদেশ ধর্ষণের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বখাটে প্রেমিক, পাড়ার মাস্তান, কর্মকর্তা, বাস কন্ডাক্টর, শিক্ষক, মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার নারী ও শিশুরা। ৯ মাস বয়স থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না। রেহাই পাচ্ছে না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল— এমনকি পুলিশ স্টেশনেও নারীরা নিরাপদ নয়।’

বিজ্ঞাপন

সেলিমা রহমান বলেন, ‘স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে নারীকে ধর্ষণ, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মম কায়দায় শিশু হত্যা, পাশবিক নির্যাতনের পর নারীকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেওয়া—এইভাবে নানা অভিনব কায়দায় ধর্ষক লম্পটের হিংস্র থাবা সর্বত্র বিরাজমান।’

‘সুবর্ণচরের পারুল, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি, সিরাজগঞ্জের কলেজ ছাত্রী রুপাকে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে হত্যা, কাকরাইলে উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিশাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স তানিয়াকে কিশোরগঞ্জের বাসে গণধর্ষণের পর হত্যাসহ জিম-মিম-তনু-মিতু-খাদিজাদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে’— বলেন সেলিমা রহমান।

তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্য নিয়ে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। বর্তমান ভয়াবহ অনাচার-দুরাচারের বিরুদ্ধে এটি আমাদের একটি সামাজিক আন্দোলন।’

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী এবং বেগবান করা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ভিক্টিমদের আইনগত ও চিকিৎসাগত সহায়তা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা, বিশেষভাবে দু:স্থ ভিক্টিমদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য আইনগত সহায়তা প্রদান করা, ভিক্টিম নারী ও শিশুদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, ‘নারীকে নির্যাতন করা অন্যায়’—এটি পরিবার থেকে শিশুকে শেখানো, নারীর বর্তমান অবস্থা থেকে আরও বেশি ক্ষমতায়নে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দান, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা, যেকোন গণমাধ্যমে আলাপচারিতা ও পারস্পারিক কথাবার্তায় যাতে নারী বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার না পায়, সেক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গড়ে তোলা।

বিজ্ঞাপন

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কাজের ধরন: ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও করণীয় নির্ধারণ, জেলা পর্যায়ের মানববন্ধন-স্মারকিলিপি পেশ/বিক্ষোভ মিছিল/জনমত তৈরির লক্ষ্যে সেমিনার, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মহিলা দলের তাৎক্ষনিক কর্মসূচি পালন এবং আইনজীবী ফোরাম ও মহিলা আইনজীবীদের নিয়ে প্রোগ্রাম।

উপদেষ্টা পরিষদ: অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও রুহুল কবির রিজভী।

সদস্য: আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, রাশেদা বেগম হিরা, মীর সরফত আলী সপু, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, লুৎফর রহমান কাজল, আফরোজা আব্বাস, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুহম্মদ মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, এ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, দীপেন দেওয়ান, মোাফিজুর রহমান বাবুল, ডাঃ রফিকুল ইসলাম, বেবী নাজনীন, মনিরজ্জামান মনি, মিসেস বিলকিস ইসলাম, মিসেস ফরিদা ইয়াসমিন, মীর রবিউল ইসলাম লাবলু, খান রবিউল ইসলাম রবি, কাজী রফিক, একরামুল হক বিপ্লব, অ্যাডভোকেট সিমকি ইমাম খান, মশিউর রহমান বিপ্লব, লায়লা বেগম, সাইফুল ইসলাম, রুমানা মাহমুদ, আলী আহম্মেদ, কনক চাঁপা, এলবার্ড পি কস্ট্রা, আব্দুল খালেক, অ্যাডভোকেট আবু সেলিম চৌধুরী, এস. এ. সিদ্দিক সাজু, ইশরাক হোসেন, জাহেদুল আলম হিটো, মাহবুব আলমগীর আলো, রেজাউল হাসান কয়েস লোদি. অ্যাডভোকেট নুরুল হক, লিটন আকন্দ, সাজ্জাদ হোসেন লাবলু, সাঈদ আহমেদ, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী, রাশেদা ওয়াহিদ মুক্তা, শামীমা আকবর, তরুণ দে, রফিকুল ইসলাম জামাল, শাহ আহমেদ মোজাম্মেল চৌধুরী, মিসেস শামসুন্নাহার পান্না, আরিফা সুলতানা রুমা, অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার শাম্মী, মঞ্জুর এলাহী, আসিফ আলতাফ, সাদিয়া হক, অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা ও রিটা আলী।

উপদেষ্টা এবং সদস্যদের নাম ঘোষণা শেষে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যাদের নাম ঘোষণা করা হলো, তাদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু আমরা সেটা উল্লেখ করিনি। কারণ, ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে নানা পেশা ও শ্রেণির মানুষ কাজ করতে পারবে। চাইলে আগ্রহী সাংবাদিকরাও এ ফোরামে যুক্ত হতে পারবেন। আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিকরা এই ফোরামে যুক্ত হলে আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজ হবে। সাংবাদিকদের লেখনি এবং প্রচার ছিল বলেই ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বাধ্য হয়েছে সরকার।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, মীর সরফত আলী সপুসহ অনেকেই।

‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ গঠন বিএনপির টপ নিউজ বিএনপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর