ডেঙ্গু ঝুঁকিতে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য রোগীরা
২৩ আগস্ট ২০১৯ ১৭:১৮
ঢাকা: এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর সংক্রমণ এখন রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকার বাইরে এখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাসাপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা সেল থাকলেও বাড়তি চাপের জন্য খোলা হয়েছে বিশেষ ইউনিট। এতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য রোগী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ঝুঁকিতে দিন পার করছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মিটফোর্ড হাসাপাতালের ২ নম্বর ভবনের ৫ম তলায় গত ১ আগস্ট ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ১১০ জন রোগীর জন্য সিট বরাদ্দ রয়েছে। তবে বর্তমানে হাসপাতালে চার শতাধিক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রকম চাপ থাকায় বাধ্য হয়ে ডেঙ্গু রোগীদের অন্যান্য বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ইসমাত জাহান সারাবাংলাকে জানান, এই ওয়ার্ডে কোনো সময়ের জন্য সিট খালি থাকে না। যদি কেউ চলে যান তাহলে সাথে সাথে অন্য কোনো বিভাগ থেকে ডেঙ্গু রোগী এনে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা করে যাচ্ছি। কয়েকদিন আগে এই ওয়ার্ডের নার্স লিপি আক্তার ও সারমিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বর্তমানে তারা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যারা ডেঙ্গু রোগীর সাথে এসেছেন তারাও রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। এখানে কেউই নিরাপদে নেই। ’
মিটফোর্ড ৩ নম্বর ভবনের নিচতলার পুরুষ ইউনিটে মোট ১০৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী। ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স কবিতা বিশ্বাস সারাবাংলাকে জানান, এখানে ১০৪ জন রোগীর জন্য মাত্র চারজন নার্স রয়েছেন। এদের মধ্যে দুপুরে দুজন আর রাতে দুজন থাকে। অন্যান্য বিভাগেও ২০০/২৫০ জন রোগীর জন্য মাত্র কয়েকজন নার্স নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকি। ডেঙ্গু রোগে কখন যে আক্রান্ত হব, তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। হাসাপাতালে যারা আছেন- দর্শনার্থী থেকে শুরু করে কেউ নিরাপদ নয়। ’
মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলে ও স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন সিরাজ মিয়া (৫৫)। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন আগে আমার স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর ছেলেরও ডেঙ্গু ধরা পরে। ভর্তি করার সময় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সুযোগ পাইনি। এজন্য মেডিসিন বিভাগের একটা ওয়ার্ডে তাদের ভর্তি করা হয়। তবে ওই ওয়ার্ডগুলোতে ভালো চিকিৎসা হয় না। তবে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে স্থানান্তরের পর ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, ডেঙ্গু রোগীর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। একটু কেয়ার নিলে ভালো হয়ে উঠবে। একটু কেয়ারের জন্য হাসপাতালে আসা। এসেই দেখে মহাকাণ্ড। চারিদিকে শুধুই ডেঙ্গু রোগী। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু রোগী রয়েছে, যা অন্যান্য রোগীর জন্য বেশ বিপদজনক।’
কেরানীগঞ্জ থেকে মেয়ের কিডনির চিকিৎসার জন্য এসেছেন আমিনুল ইসালম (৪৫)। তিনি বলেন, ‘আমার রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না। এর মধ্যে যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তবে মহাবিপদ ঘটবে। হয়তো বাঁচার সুযোগ আর থাকবে না। বেশ আতঙ্কের মধ্যেই হাসপাতালে আছি।’
এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের নার্স সুপারভাইজার সুবর্ণা বাড়ই সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতাল থেকে শুরু কোনো জায়গায়ই মানুষ নিরাপদ নয়। আর আমরা যারা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত তাদের জীবনতো আরও ঝুঁকিতে রয়েছে। একমাত্র সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আনতে।’
আরও পুড়ন: মিটফোর্ডে ডেঙ্গুতে এক নারীর মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ৭১