অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক
২৩ আগস্ট ২০১৯ ২০:৫৭
ঢাকা: ভারতীয় উপমহাদেশের বাম রাজনীতির পুরোধা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিদের অন্যতম, মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলির মধ্যে বেঁচে থাকা সর্বশেষ সদস্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।গত ১৪ আগস্ট তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এর মৃত্যুতে শোক ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবার সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’
শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মরহুমের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে মোজাফফর আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি অধ্যাপনার পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। প্রথমে ঢাকা কলেজ এবং তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়িয়েছেন। রাজনীতির প্রয়োজনে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।
১৯৫২ সালে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রাম তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের বড়ো অবদান রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক। ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীরও তিনি অন্যতম সংগঠক।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার যে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছিল তার সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও জনমত গড়ে তোলার জন্য তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘেও তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।
১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক মোজাফফর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ন্যাপ-সিপিবি ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে তিনবছর আগে সরকার স্বাধীনতা পদক দিতে চেয়েছিল। তিনি সবিনয়ে তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।