Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক প্রকল্পে ৩৬% ব্যয় বাড়ছে


২৭ আগস্ট ২০১৯ ০৬:০০

ঢাকা: ব্যয় বাড়ছে আলীকদম-জালানিপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৩৭৪ কোটি টাকা। এখন ১৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৫০৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। শুধু ব্যয়ই নয়, বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদও।

২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও দুই বছর বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এ সড়কটি নির্মাণের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৯ মার্চ  প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজ মঙ্গলবারের (২৭ আগস্ট) অনুষ্ঠেয় সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, আলীকদম-জালানীপাড়া-করুপাতা-পোয়ামুহুরী সড়কটি নির্মিত হলে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি দূরবর্তী ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উৎস থেকে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিকবার যানবাহন পরিবর্তনসহ অতিরিক্ত লোডিং ও আনলোডিংয়ের প্রয়োজন হয়। এর ফলে প্রকল্পটির অন্যতম প্রধান নির্মাণ সামগ্রী পাথর ও বালুর মূল্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রেট শিডিউরের চেয়ে বেড়ে গেছে।

আরও বলা হয়, এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ভূমির প্রকৃতি অন্যান্য পাহাড়ি এলাকা হতে পৃথক হওয়ায় এবং প্রকল্প এলাকার বেশিরভাগ স্থানের মাটিতে পাথর মিশ্রিত থাকায় মাটি কাটার কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার খাড়া ঢাল ব্যবস্থাপনার কারণে অতিরিক্ত মাটি প্রয়োজন। এর ফলে মাটির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটি উঁচু-নিচু পাহাড় ও সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত বেশি ঢাল বিশিষ্ট এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে পানি সংগ্রহের উৎসগুলো অনেক দূরে অবস্থিত। দূরবর্তী স্থান থেকে পানি পরিবহন করার ফলে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে।

আরও বলা হয়েছে, শীতকালে মাতামুহুরী নদীতে পানি থাকে না। ফলে সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ অত্যন্ত দুঃসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এক্ষেত্রে কুরুপাতা ঝিরি, ক্রিল্লাইপাড়া ঝিরি, বালি ঝিরি, বড় বেটি ঝিরি ও ছোট বেটি ঝিরিতে নতুনভাবে চারটি ওয়াটার ড্যাম নির্মাণ প্রয়োজন। এ নতুন অংশটি ১৪ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলনসহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় এর নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদকাল আরও একবছর বাড়ানো প্রয়োজন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব অংশে বান্দরবান জেলার অবস্থান। বান্দরবানের অন্যান্য উপজেলার মতো আলীকদম উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। শিক্ষা সুবিধা ও স্থাপনার অপর্যাপ্ততার কারণে থানচি উপজেলার দক্ষিণে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষরতার হার খুবই কম। ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডাক্তারের অপ্রতুলতার কারণে মানুষ স্বাস্থ্যগত মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এসব মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য স্থানীয় জনগণ আলীকদম উপজেলার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে স্থানীয় জনগণের উপজেলা সদরে পৌঁছাতে প্রায় এক থেকে দুই দিন সময় লাগে। আলীকদম থেকে পোয়ামুহুরী পর্যন্ত ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থে উন্নয়নের জন্য ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি কিছু অংশের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৫২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ১৬ দশমিক ৯৭ লাখ ঘন মিটার সড়ক নির্মাণে হিল কাটিং, ৩ লাখ ঘন মিটার ব্যাকফিলিং অ্যাবান্টমেন্ট ও উইং ওয়াল, ৩৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নতুন নির্মাণ, ৯১৯ মিটার আরসিসি ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট, ১২৫ মিটার আর্থ ওয়াটার ড্যাম, ৭২ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৪২ মিটার ড্রপ স্ট্রাকচার, ৪৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সাইড ড্রেন এবং ১১ হাজার ২৫০ বর্গ মিটার রোড মার্কিং করা হবে।

আলীকদম উন্নয়ন প্রকল্প


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর