Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুয়া সাংবাদিক-মানবাধিকারকর্মী, পথশিশুর উপার্জনে পকেটভারি তার


২৭ আগস্ট ২০১৯ ২৩:৪৮

ঢাকা: শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। ডেঙ্গু আক্রান্ত বাচ্চাদের চিকিৎসায় ব্যস্ত চিকিৎসকসহ হাসপাতালের সব স্টাফ। এর মধ্যেই দেখা গেল, এক শিশুকে মারধর করছেন এক ব্যক্তি। একইসঙ্গে উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে যাচ্ছিলেন শিশুটিকে। শুরুতে ওই ব্যক্তিকে শিশুটির অভিভাবক মনে হলেও ওই ব্যক্তির আচরণ মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। পরে চিকিৎসকসহ হাসপাতালের স্টাফরা এগিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে চমকে ওঠার মতো তথ্য। প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তির সঙ্গে শিশুটির কোনো সম্পর্কই নেই। বরং পথশিশুটিকে নিজের কাছে রেখে উপার্জনের পথ বের করে নিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরেকটু জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ওই ব্যক্তি একবার নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক, একবার সমাজকর্মী, একবার কৃষক লীগের নেতা। তিনি নিজে একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বলেও দাবি করেন। একপর্যায়ে নিজেকে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্যের ‘খাস লোক’ বলেও দাবি করেন। উপস্থিত চিকিৎসক আর সাংবাদিকদের প্রশ্নের অসংলগ্ন উত্তরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, শিশুটিকে নিয়ে প্রতারণা করছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তার রুমে আলমগীর

শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে পথশিশু, নাম আনাস। সে জানায়, আলমগীর হোসেন নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। মাসখানেক হলো ওই ব্যক্তি তাকে নিজের কাছে রেখেছেন। তবে তাকে ব্যবহার করেই অর্থ উপার্জন করছেন আলমগীর। খেতে না দেওয়া, মারধরের অভিযোগও করে সে।

আনাস সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করে বলে, ‘ও আমারে দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আমার চিকিৎসার নামেই টাকা তুলে। কিন্তু আমাকে কিছু খেতে দেয় না। হাসপাতালের খাবারের বাইরে মাঝে মধ্যে কিছু খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমাকে তাও দেওয়া হয় না। চারটা পরটা কিনলে সে তিনটা খেয়ে ফেলত, আর আমাকে চা দিয়ে একটা পরটা খেতে দিত। আমার সঙ্গে এর আগেও সে খারাপ ব্যবহার করেছে।’

এই সময় শিশু আনাসের অভিযোগ, তার সঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে এবং আলমগীরের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা নানা সময়ে তাকে বলাৎকারের চেষ্টাও করেছে।

শিশু আনাস

আনাসের সঙ্গে কথা বলার সময় আলমগীর ছিলেন চিকিৎসকদের রুমে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিচ্ছেন তিনি। সমাজসেবক হিসেবেও দাবি করেন।

জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় একমাস ধরে ছেলেটি আমার সঙ্গে থাকে। আমি ওকে মতিঝিল-গুলিস্তান রুটের একটি বাসে পাই। সেখান থেকে বাসায় নিয়ে আসি। পরে ওর শরীর খারাপ হলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করাই।’

আলমগীর বলেন, আমি একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। একইসঙ্গে নিজে একটি মানবাধিকার সংস্থার দায়িত্বেও আছি। বাচ্চাটিকে তাই মানবতাবোধ থেকেই আমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

শিশুটির গায়ে হাত কেন তুলেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে করেছি।’ অভিভাবক হলেও শিশুকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করার অধিকার আছে কি না— জিজ্ঞাসা করলে তার নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। নানা প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদপুর কৃষক লীগের সহসভাপতি বলেও দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে আনাসের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসময় বিভিন্ন ধরনের অসংলগ্ন কথা বলে যাচ্ছিলেন তিনি।

কোন পত্রিকার সাংবাদিক— জানতে চাইলে আলমগীর নিজেকে ‘দৈনিক মুক্ততথ্য’ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার বলে দাবি করেন। পত্রিকার আইডি কার্ড থাকলেও নিজের কোনো ভিজিটিং কার্ড তিনি দেখাতে পারেননি। আইডি কার্ডেরও মেয়াদ ছিল না। আইডি কার্ডে থাকা পত্রিকা অফিসের নম্বরে ফোন করা হলে নুরুল ইসলাম নামে একজন জানান, আলমগীর হোসেন নামে তাদের কোনো সিনিয়র রিপোর্টার নেই।

এসময় চিকিৎসক ও হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ উপস্থিত সবাই বিষয়টি হাসপাতাল প্রশাসনকে জানালে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কে. এম. মামুন মোর্শেদ স্থানীয় শেরেবাংলা নগর থানাকে বিষয়টি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানা থেকে পুলিশ এসে শিশু আনাসকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। আলমগীর হোসেনকেও আটক করা হয় এসময়।

পরে শেরেবাংলা নগর থানায় যোগাযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  জানে আলম মুন্সী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিশুটিকে নিরাপদে রেখেছি। ওর নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য আমরা ওকে সেফ হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আর আলমগীর হোসেনের কথাবার্তা আমাদের কাছে অসংলগ্ন মনে হয়েছে।’

ওসি বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন এবং এই ধরনের প্রতারকের কাছে যেন বাচ্চাটিকে দেওয়া না হয়, সেই অনুরোধ করেছেন।

ওসি জানান, আলমগীর পুলিশের কাছেও নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো মানবাধিকার সংগঠনের সংগঠক ও কখনো একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বলে দাবি করেছেন। জানে আলম মুন্সী বলেন, আলমগীর হোসেনের এলাকার লোকজনও আমাদের থানায় এসেছিল। তারাও বলছেন, তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।

https://youtu.be/kSwZwlay6TI

পথশিশু প্রতারক ভুয়া সাংবাদিক শিশু নির্যাতন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর