তারেকের মৃত্যুদণ্ডের জন্য নতুন লড়াইয়ে ছাত্রলীগকে নামার আহ্বান
২৮ আগস্ট ২০১৯ ০৪:০০
ঢাকা: তারেক রহমানকে বাংলার মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে ছাত্রলীগকে নতুন করে জিততে হবে এবং ছাত্রলীগকে সেই বিজয় ছিনিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তারেক রহমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের প্রত্যাশিত রায় হতে পারে না। এই রায় বাংলার ছাত্রসমাজ মেনে নিতে পারে না।’
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তুলে ধরে আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কখনোই হত্যা করা সম্ভব হতো না, যদি না পাকিস্তানি গোয়েন্দাবৃত্তির নায়ক জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়াউর রহমান সেদিন পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে পিতাকে হত্যা করার সকল ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত না করত।
তিনি আরও বলেন, এই জিয়াউর রহমানই সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সমস্ত পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন। ক্যাপ্টেন বেগের সেই চিঠি জিয়াউর রহমানের কাছে, সেই চিঠিই প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান তুমি চিন্তা করো না। তোমার স্ত্রী তোমার পুত্র তারা আমাদের হেফাজতে আছে, তারা ভালোভাবে আছে। তোমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব তুমি পালন কর। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না, কিন্তু তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবনে ১৯ বার হত্যার হুমকি এসেছে দাবি করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি যখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে। এই প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু কন্যার গাড়ি ক্রেন দিয়ে টেনে তুলে সেখানে গুলি চালানো হয়েছিল এবং লক্ষ্য ছিল একটাই বঙ্গবন্দু কন্যা শেখ হাসিনাকে চিরতরে বিদায় করে দেওয়া।’
‘২১ শে আগস্টের ঘটনাও তাই। কিন্তু আজকে ছাত্রলীগের সামনে একটা মাত্র দায়িত্ব, ছাত্রলীগের সামনে একটি মাত্র কর্তব্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সামনে একটা মাত্র যুদ্ধ, একটা মাত্র লড়াই। ওরা অস্ত্র দিয়ে, গ্রেনেড দিয়ে আমার প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর শেষ সম্বলকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আমরা ছাত্রলীগ বেঁচে থাকতে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের সামান্যতম অস্তিত্ব এই বাংলার মাটিতে রাখতে চাই না, আমরা তা রাখব না, এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
‘এই কাজটি করতে হলে, আজকে আমাদের প্রধানতম কাজ হল শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে একমাত্র অপরিহার্য করে তোলা।’
‘আমি আজকে আগাম কোনো কথা বলতে চাই না। তবে এই কথাটুকু বলে সতর্ক করতে চাই, আজকে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ষড়যন্ত্র সামনে চলবে এবং এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার বীর সেপাহ সালার হিসেবে ছাত্রলীগকে দায়িত্ব নিতে হবে’ বলেন আবদুর রহমান।
বাংলাদেশে ছাত্রলীগের আন্দোলনে সংগ্রামের অতীত সংগ্রামমুখর ইতিহাস তুলে ধরে আগামী দিনেও বাংলাদেশকে ছাত্রলীগকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘শোভন-রাব্বানী এবং সনজিত-সাদ্দামকে একটা কথা বলি, আমাদের প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজের হাতে তোমাদেরকে নেতৃত্বে বসিয়েছেন। তার অনেক আকাঙ্ক্ষা, তার অনেক স্বপ্ন। তার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হলে তোমাদেরকেও প্রমাণ করতে হবে, তোমরা শেখ হাসিনার খাঁটি সৈনিক। তোমরা শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক। তোমরা বেঁচে থাকতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রেই বাংলার মাটিতে সংঘটিত হতে পারবে না। তোমরা হতে দেবে না, তোমাদেরকে সেই লক্ষ্য নিয়ে এগুতে হবে।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আব্দুর রহমান বলেন, ’২১ শে আগস্টের বিচার হয়েছে। তারেক জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদন্ড বিচারিক আদালত ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে আমার কোন কথা নেই। তবে আমার একটি আক্ষেপ রয়েছে, মুফতি হান্নান যিনি ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছেন তিনিই বলেছেন, তারেকের হুকুমেই এই হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে। বাবর আফসোস করে বলেছে, যার হুকুমে ২১ শে আগস্ট হামলা সংঘটিত হল, তার বিচারের রায় হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর আমার হলো ফাঁসি।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাস-তাণ্ডবের বিভিন্ন ঘটনা তুলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুঃখের সাথে বলতে হয়, একজন সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর যিনি আজকে জিয়া পরিষদের উপদেষ্টা তার বাড়িতে ছাত্রদলের অস্ত্র সংরক্ষিত থাকত। কিন্তু আগস্টের দিনে আপনাদেরকে বলতে চাই, অস্ত্রের রাজনীতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আদর্শের রাজনীতি করে। আমাদেরকে আদর্শের ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই অস্ত্রকে আমরা ভেঙে খাঁন খাঁন করে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করব এবং সেদিনেই কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বরিকুল ইসলাম এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান।