Tuesday 08 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধরণীর ফুসফুসের আগুন নেভাবে কে?


২৮ আগস্ট ২০১৯ ১৩:২৪ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৩০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পৃথিবীর  ২০ ভাগ অক্সিজেন যেখানে সৃষ্টি হয় সেই ধরণীর ফুসফুস ব্রাজিলের বৃষ্টি-অরণ্য অ্যামাজন। এখানে প্রতি বছরই আগুন লাগে আর তা প্রায়শই ভয়াবহ রূপ নেয়। কিন্তু এবছর তা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্পেস রিসার্চের (ইনপে) হিসাব মতে এবছর আমাজনে ৭৪ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে যা ১৯১৮ সালের এই সময়ের চেয়ে ৮৪ ভাগ বেশি। ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ আগুন এটি। এই আগুন লাগাটা অন্যান্য জঙ্গলে আগুন লাগার মতো কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা না। বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চল হওয়ায় ওই বৃষ্টি-অরণ্য প্রকৃতিকভাবেই সুরক্ষিত। অন্যান্য জঙ্গলে বজ্রপাত, বিদ্যুৎ অথবা ঘর্ষণের ফলে হঠাৎ আগুন লেগে শুকনো পাতায় বাতাসে তা ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এই জঙ্গল স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ায় কখনোই এভাবে আগুন লেগে যায়না। স্থানীয় পরিবেশবিদরা নিশ্চিত যে, প্রাকৃতিকভাবে এই  আগুন না লাগলেও এবার এর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ব্রাজিলের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। ব্রাজিলের বিভিন্ন অঞ্চলের  অ্যামাজন অরণ্যে প্রায় ৮০ হাজার জায়গায় আগুন লাগানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এই আগুন লাগার পেছনে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়টা অত্যন্ত গভীরভাবে জড়িত। যুগ যুগ ধরেই অ্যামাজনের সম্পদ লুটে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলে আসছে। অ্যামাজনের বিভিন্ন প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে সম্পদ আহরণে নানান প্রকল্প চালিয়ে আসছে। এ বছর ১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ক্ষমতা গ্রহণের পর অ্যামাজনের ভূমি ব্যবহারের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন। আর এই সুযোগে ভূমি দস্যু, খনিজ সম্পদ আহরণকারী কোম্পানি, কৃষি কাজে ব্যবহার করতে বড় বড় খামার মালিকরা তাদের ভূমির পরিমান বাড়াতে আগুন লাগিয়ে জমি খালি করে তা দখলের মহোৎসবে নামে। বিগত দু’দশক ধরেই বন উজাড় করার কাজ চলছিল।

তবে এবারের ভয়াবহতার জন্য সারা বিশ্ব প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, কারণ তিনি তার নির্বাচনি প্রচারনার সময়ই পরিবেশ রক্ষা আইন শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিবিসির প্রাক্তন সাংবাদিক জ্বালানি ও জলবায়ু বিষয়ক অনুসন্ধানি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালক রিচার্ড ব্লাকের মতে, ব্রাজিলের যে তিনটি প্রদেশের অংশে জঙ্গলে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ অনুসারিদেরই এলাকা। তবে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো এসব অস্বীকার করে বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক এনজিওগুলোকে এই দাবানল সৃষ্টির ও অপপ্রচার চালানোর জন্য দায়ী করছেন।

যেহেতু অ্যামাজনের দাবানলকে কখনই ব্রাজিল গুরুত্বের সঙ্গে দেখে না তাই এই দাবানল নেভানোর উদ্যোগও ঢিলেঢালাভাবেই চলে। এবারও ব্রাজিল সরকার শুরুর দিকে আগুন নেভাতে তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। তবে যখন সারা বিশ্ব অ্যামাজনের আগুনের বিষয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা শুরু করে আর সারা দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে এসে প্রেসিডেন্ট বিরোধী শ্লোগান দিতে শুরু করে যে, হয় বন থাকবে আর আর তা হলে বলসোনারা চলে যাবে তখন ব্রাজিল সরকার নড়েচড়ে বসে। এরপরই সেনাবাহিনী নিয়োগসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। সেখানে ইতিমধ্যে ৪৪ হাজার সেনা সদস্য আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েছে।

আমাজনের আগুনের বিষয় প্রথম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফ্রান্স  এবং জি-৭ বৈঠকে এই আলোচনা নিয়ে আসে। জি-৭ দেশগুলো আগুন নেভানোর জন্য দুই কোটি ডলার সহায়তা প্রদানের কথা বললে প্রথমে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো প্রথমে তা গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তা প্রত্যাখান করেন। ব্রাজিলের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী রিকার্ড স্যালেস জানান ,আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বন রক্ষার জন্য এই অনুদান গ্রহণে রাজী হলেও পরবর্তিতে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে তা প্রত্যাখান করেন। মূলত তিনি ফ্রান্সের উপর ক্ষিপ্ত হয়েই এটি প্রত্যাখান করেন বলে জানানো হয়। তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনকে উদ্দেশ্য করে বলেন তিনি যেন তার নিজের ঘর আর তার কলোনি সামলান, ব্রাজিলকে না (তিনি তার দেশের ঐতিহ্যবাহী গির্জাই রক্ষা করতে পারেননি উনি আমাদের কি শেখাতে চান)।

বৃটেন ও কানাডাও যথাক্রমে ১ কোটি ২০ লাখ ও ১ কোটি ১০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই দুটি দেশের অনুদান গ্রহণ করা হবে কিনা সে সম্পর্কে এখনো ব্রাজিল কিছু জানায়নি। তবে ব্রাজিল ইসরায়েলের সঙ্গে সহায়তার ব্যপারে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কথা জানিয়েছে।

ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফারনান্দ আজেভেদো ই সিল্ভা দাবি করেন যে, ব্রাজিলের জঙ্গলের আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে কিন্তু জাতীয় মহাশুন্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ইনপে বলছে যে বনের আরো এক হাজার ১১৩ টি নতুন জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে। এর আগে আগুন লাগানোর বিভিন্ন জায়গার প্রমাণসহ বিস্তারিত ডাটা ও তথ্য দেওয়ার দায় ইনপের পরিচালক রিকার্ড গাল্ভাওকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অ্যামাজন বৃষ্টি-অরণ্য বেষ্টিত দেশগুলোও এবার ব্রাজিলের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। কলাম্বিয়া ও বলিভিয়া শুরুতেই আগুন নেভানোর জন্য বিশাল সুপার ট্যাঙ্কার বিমান পাঠায়। পরবর্তিতে কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডিউক জানান যে এই বন রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব আর এ ব্যাপারে অ্যামাজন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি করে তা রক্ষার সব ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে পেরুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দেশটি জাতিসংঘে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করবে বলেও জানিয়েছে।

অ্যামাজন জঙ্গলের ৬০ ভাগ ব্রাজিলে আর বাকি অংশগুলো বলিভিয়া, কলাম্বিয়া, পেরু, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, ফরাসি গিয়ানা, গায়ানা ও সুরিনাম জুড়ে রয়েছে। পৃথিবীর ফুসফুসকে রক্ষা করতে আমাজন দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের সব দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে।

অ্যামাজন অ্যামাজনে আগুন ওমর তাসিক টপ নিউজ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর