জাহালম ইস্যু: ১১ কর্মকর্তার বিস্তারিত জানাল দুদক
২৮ আগস্ট ২০১৯ ২৩:০৩
ঢাকা: বিনা দোষে তিন বছর জেল খেটে মুক্ত হওয়া বহুল আলোচিত ২৬ মামলার আসামি টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আসামি করার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের জন্য দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক। এ সংক্রান্ত তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কোন কর্মকর্তা কী জন্য দায়ী, তা বিস্তারিতভাবে আদালতকে জানায় দুদক। এ ঘটনায় আগামী ২৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। আদালতে দোষী ১১ কর্মকর্তার তালিকা উপস্থাপন করেন দুদকের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন।
জাহালমের ঘটনায় যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক বিভাগীয় মামলা করেছে তারা হলেন— সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল্লাহ-আল-জাহিদ, রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মেজবাহ উদ্দিন, উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক (সাবেক সহকারী পরিচালক) দেবব্রত মন্ডল, উপপরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, ঢাকা-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমিত্রা সেন, সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক মেফতাহুল জান্নাত, সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সাবেক উপসহকারী পরিচালক) রাফী মো. নাজমুস সাদাত।
এদিকে, ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন— শ্যামলী শাখার ব্যবস্থাপক সাবিনা শারমীন ও আসাদগেট শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. ফয়সাল কায়েস।
একইসঙ্গে সোনালী ব্যাংক পৃথক প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে জানিয়েছে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরা হলেন— মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক আজিজুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক আখলাফুন নাহার, সাবেক সিনিয়র অফিসার নিজাম উদ্দিন ও সাপোর্টিং সাব স্টাফ মো. মাইনুল হক; ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাপোর্টিং সাব স্টাফ মো. মিজানুর রহমান; স্থানীয় কার্যালয়ের সাপোর্টিং সাব স্টাফ আজিজুল হক; স্থানীয় কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান এবং স্থানীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহতাব উদ্দিন।
দুদক গত ২১ আগস্ট আদালতকে জানায়, ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। তবে আদালতে সেদিন ১১ কর্মকর্তার তালিকা এবং জাহালমের ঘটনায় তাদের কার কী ভূমিকা— তা বিস্তারিত তুলে ধরার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের আলোকে আজ দুদক তালিকা দাখিল করে।
দুদক আইনজীবী ওই ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তারিতভাবে পড়তে থাকলে আদালত বলেন, আমরা এর বিচার করতে বসিনি। আপনারা প্রতিবেদন দিয়ে স্বীকার করেছেন যে আপনাদের ভুলের শিকার জাহালম। এখন জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দিন।
দুদক আইনজীবী বলেন, স্বীকার করেছি ঠিক। এজন্য বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। শুধুই দুদক একা নয়, ব্যাংকেরও দায় ছিল।
আদালত বলেন, ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে রুল আছে তার ওপর শুনানি হোক।
দুদক আইনজীবী আপত্তি জানিয়ে বলেন, এখনই এটা করা ঠিক হবে না। দায়ীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তার তদন্ত হবে। এরপর পুরোপুরি কার দায় কতটুকু তা নির্ধারিত হবে।
এসময় আদালত বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা কবে শেষ হবে। তার সে পর্যন্ত জাহালম কি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে?
জাহালম দুদকের ১১ কর্মকর্তা দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা বিভাগীয় মামলা