বিআরটিসি’তে নতুন চেয়ারম্যান, সামলাতে হবে নানা চ্যালেঞ্জ
২৯ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৫৩
ঢাকা: শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারা, বাস লিজে অনিয়মসহ নানা অভিযোগের পর সরিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূইয়াকে। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশে তার জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এহসান ই এলাহী। আগামী দু’একদিনের মধ্যে কাজে যোগ দেবেন তিনি। তবে তার সামনে অপেক্ষা করছে নানা চ্যালেঞ্জ।
আগের চেয়ারম্যানের আমলে বিআরটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহিরাগতদের গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট, বাস লিজে অনিয়ম, নিয়মিত বেতন দেওয়াসহ নানা চ্যালেঞ্জ এখন তার সামনে। এছাড়া আগের চেয়ারম্যান ফরিদ ভুইয়ার ‘অবৈধ সুবিধা’র মাধ্যমে ভারতীয় বাস কোম্পানি থেকে নিম্নমানের বাস সংগ্রহের বিষয়টি এরইমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। এর জেরেও নতুন চেয়ারম্যানকেই সামলাতে হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে নতুন চেয়ারম্যান এহসান ই এলাহী জানান, তার প্রথম কাজ হবে সারাদেশের ডিপোগুলো নিয়মিত বেতন দেওয়া। এছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে তিনি বিআরটিসির ম্যানেজমেন্টে ‘পরিবর্তন’ আনবেন বলেও আভাস দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদায়ী চেয়ারম্যান ফরিদ ভূঁইয়া তার কার্যালয়ের ডিজিএম (অপারেশন) মনিরুজ্জামান, ডিজিএম (তেজগাঁও ওয়ার্কশপ কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা) আশরাফকে সঙ্গে নিয়ে একটি পৃথক সিন্ডিকেট গড়েছিলেন। যারা বাস বহিরাগতদের হাতে বরাদ্দ দিত বিআরটিসির কোনো নিয়ম ছাড়া। এরপর বহিরাগতরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ডিপোকে দিয়ে লাভ ভাগাভাগি করতো এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে।
নতুন আনা ভারতীয় বাসগুলোও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে বহিরাগতরা নিয়ন্ত্রণ করছে। সরেজমিন, উত্তরা-কুড়িল-মতিঝিল রুটে দেওয়া এসি বাস পরিচালনাতেও দেখা গেছে এই বহিরাগতদের। যারা বিআরটিসির নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এ ব্যাপারে বিআরটিসির ডিজিএম (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বাবুর কাছে জানতে চাইলে, তিনি বাস বরাদ্দে অবৈধ টাকা নেওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন।
যদিও বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তরা জানান, চেয়ারম্যান তাকে (ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু) ঢাকার ৪টি বাস ডিপো এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রাক ডিপোর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। যে ডিপোগুলোতে বা ও ট্রাক বরাদ্দে সবেচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ। পরে অবশ্য মনিরুজ্জামান বিআরটিরি ৪টি বাস ডিপোও ২টি ট্রাক ডিপো দেখেন বলে স্বীকার করেছেন।
বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের অপারেশন বিভাগের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় আমদানি করা হয়েছে ৩৯৭টি বাস। এর মধ্যে ২৩৩টি বাস বিভিন্ন ডিপোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখনো বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে ১৬৪টি বাস। ইজারাদারদের কাছে বেশি টাকা দাবি করায় দীর্ঘদিন এ ১৬৪টি বাস বসিয়ে রাখা হয়েছে বলে চালক-শ্রমিকদের অভিযোগ।
এমনকি শেষ মুহূর্তেও আগের চেয়ারম্যান পুরানো ইজারাদারদের বাসের রাজস্ব ছাড়াও অবৈধ ভাবে মাসিক ৩ লাখ টাকার বেশি দাবি করেন। কুড়িল-তিনশ ফিট থেকে নরসিংদীগামী বাসের ইজারাদার জিল্লুর রহমান এই অভিযোগ তুলেছেন। এ কারণে ২৩ ও ২৪ আগস্ট এই রুটে বাস চালানো বন্ধ রেখেছিলেন তিনি।
বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে এনে বরাদ্দ দেওয়া ২৩৩ টি বাসের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিটি বাস ছিল ৭৬টি এবং ইন্টারসিটি ১টি বাস। এছাড়া নন এসি ৭৮টি ও দ্বিতল ৭৮ টি বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এতো বাস এলেও বিআরটিসি’র প্রধান আইকনিক রুট হিসেবে পরিচিত মতিঝিল-আব্দুল্লাপুর রোডে বাস দেওয়া হয়নি। রাজধানীর ব্যস্ততম এবং একই সঙ্গে বিআরটিসির জনপ্রিয় এই রুট এখন প্রায় বন্ধের পথে।
পাশাপাশি চলতি বছর ভারত থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ নতুন বাস আসার পরও ঢাকাসহ দেশের ২০টি ডিপোর শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়েছে ছয় মাস থেকে প্রায় একবছর পর্যন্ত। নতুন চেয়ারম্যান তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে এটাকেই বিবেচনা করছেন। এরপরই বিআরটিসিতে স্বচ্ছতা আনতে নজরদারি এবং তদারকি বাড়াবেন তিনি।
উল্লেখ্য, বদলি আদেশের পরও ফরিদ ভুইয়া সরে না যাওয়ায় এবং নতুন একজন চেয়ারম্যান যোগ না দেওয়ায় খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মন্ত্রণলায়ের অতিরিক্ত সচিব এহসান ই এলাহী চেয়ারম্যান পদে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। সে নির্দেশ অনুযায়ীই এহসান এলাহী দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।