ইন্টারভিউ বোর্ডে ‘ওয়াইন’ অফার করা হয় ধর্ষণের শিকার তরুণীকে
২৯ আগস্ট ২০১৯ ২০:৪২
ঢাকা: রাজধানীর শ্যামলীতে হেলথ ভিশন নামে ভুয়া চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার তরুণীকে ইন্টারভিউ বোর্ডে মদপানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে তাকে সিগারেটও অফার করা হয়। তবে ওই তরুণী তাতে রাজি না হলে কোমল পানীয়ের সঙ্গে মদ মিশিয়ে পান করানো হয় তাকে। এরপর ওই তরুণী শারীরিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।
মামলার অভিযোগে এসব তথ্য জানিয়েছেন গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে তিনি ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন। পরে বুধবার (২৮ আগস্ট) শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলার অভিযোগে ওই তরুণী বলেন, রাজধানীর শ্যামলীর ৫১/১/বি ভবনের পঞ্চম তলায় ঢুকতেই সাজানো একটি ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর চাকরি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্ন করার এক পর্যায়ে আমাকে ওয়াইন ও সিগারেট অফার করে। আমি খেতে না চাইলে তারা কোকাকোলার সাথে রেড ওয়াইন মিশিয়ে ছল-চাতুরি করে খাওয়ায়।
আরও পড়ুন- চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার: আসামি রিমান্ডে
রেড ওয়াইন মেশানো কোমল পানীয় খেয়ে ভারসাম্য হারান মেয়েটি। এরপর চাকরিদাতা সেজে বসা ফাহিম আহমেদ ফয়েজ ও নাহিদ পাটোয়ারি তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে মেয়েটি সংজ্ঞা হারান। জ্ঞান ফিরলে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। পরিবারের সদস্যদের সবকিছু অবহিত করে পরদিন (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে ধর্ষণকারীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় মামলা করেন বলে মেয়েটি উল্লেখ করেন অভিযোগে।
ধর্ষণকারীদের মধ্যে নাহিদ পাটোয়ারি ওই তরুণীর পূর্বপরিচিত বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে নাহিদের সঙ্গে তার কথা হতো। চাকরি প্রয়োজন— এ বিষয়েও নাহিদের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নাহিদ তাকে মোবাইলে কল করে চাকরির ইন্টারভিউয়ের নাম করে শ্যামলীতে হেলথ ভিশনে ডাকে। ওই তরুণী শ্যামলীতে গেলে মেইন রোড থেকে তাকে রিসিভ করে নিয়ে যান নাহিদ। পরে ওই অফিসে গেলে ফাহিম তাকে অভ্যর্থনা জানান।
মামলা দায়েরের পরই নাহিদ ও ফাহিমকে ধরতে অভিযান চালায় শেরেবাংলা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয় ফাহিম।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী সারাবাংলাকে বলেন, গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির মামলা গ্রহণ করার পর রাতেই শ্যামলীর ওই ভবনে অভিযান চালিয়ে হেলথ ভিশন নামের একটি সাইনবোর্ড বিহীন প্রতিষ্ঠান থেকে ফাহিমকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আরেক আসামি পলাতক নাহিদকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ জানায়, ফাহিমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চন্দ্রসুদ্ধি কালাগাজী বাড়ি এলাকায়। ফাহিম শ্যামলীর ওই ভবনেই থাকতেন। আর নাহিদের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়। আর নাহিদ ঢাকা উদ্যানের এফ ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২২ নম্বর বাড়িতে থাকেন।
শেরেবাংলা নগর থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম জানিয়েছে, নাহিদের সঙ্গে তার অনেক দিনের সম্পর্ক। তারা ভালো বন্ধু। নাহিদ তার একজন বান্ধবী আছে জানালে তারা দু’জন মিলে সুযোগ বুঝে তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। ইন্টারভিউয়ের নামে সেই তরুণীকে ডেকে তারা সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করেন।
ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার ওয়াইন অফার গণধর্ষণ চাকরির ইন্টারভিউ