ফোম-মেশিনের বদলে এলো সিগারেট, ২ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: একবছর আগে ফোম ও প্রিন্টিং মেশিন আমদানির ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ সিগারেট এনে দু’টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকহ ৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান দু’টি হচ্ছে- ঢাকার পুরানা পল্টনের ড. নবাব আলী টাওয়ারের মেসার্স ‘গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশন লিমিটেড’ এবং ঢাকার মতিঝিলের রহমান ম্যানশনের ‘মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ’।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার মো. নুর উদ্দিন মিলন সারাবাংলাকে বলেন, “একবছর আগে আমরা দুই কনটেইনার বিদেশি সিগারেট চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করেছিলাম। সেই সিগারেট আনা হয়েছিল মিথ্যা ঘোষণায়। এছাড়া সিগারেটগুলো আমদানিও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। মূলত মিথ্যা ঘোষণার সিগারেট এনে দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাদের সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। একবছর ধরে তদন্তের পর পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।”
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে আসা একটি আমদানি কনটেইনারে বিদেশি সিগারেট আনার তথ্য পেয়ে সেটি আটক করে কাস্টমসের খালাস স্থগিত ঘোষণা করে। ওই কনটেইনারে ৩৬০ বেল্ট ফোম আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ২৮ এপ্রিল কনটেইনারটি খুলে সেখান থেকে বিদেশি দু’টি ব্যান্ডের ৬ লাখ ৩০ হাজার সিগারেটের প্যাকেট এবং ১ কোটি ৩০ লাখ শলাকা জব্দ করা হয়েছিল।
মেসার্স গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশন ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডে সিঙ্গাপুর থেকে ৮২০ মার্কিন ডলার মূল্যের ৭ হাজার ৩৫০ কেজি ফেল্ট (ফোম) আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছিল। কিন্তু এর পরিবর্তে বিদেশি আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট এনে তারা ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০ টাকা পাচার করে বলে তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। এর আগেই সাড়ে ৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টার অপরাধে ২৫ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
সর্বশেষ গত (২০১৯ সাল) ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিটের সদস্য শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) এর ৪ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয়েছে তিনজনকে। এরা হলেন- মেসার্স গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশনের মালিক দেওয়ান বুলবুল ইসলাম, সহযোগী ব্যবসায়ী নুর আল মামুন রুবেল এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এ. জান চৌধুরী এন্ড সন্সের মালিক আফজাল জান চৌধুরী।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেট বহনকারী আরেকটি কনটেইনার আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ৬ মে কনটেইনারটির কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। কনটেইনার খুলে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর থেকে ৫ হাজার ১১০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্র্যান্ড নিউ প্রিন্টিং মেশিনারি আমদানির ঘোষণা দিয়ে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড ক্রেডিট ব্যাংকে আমদানি ঋণপত্র খুলেছিল।
২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তারা আমদানির অনুমতি পায়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী পণ্যের বদলে আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট এনে তারা এক কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ২০৫ টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে তদন্তে পেয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিটের সদস্য সচিব প্রসাদ কুমার মণ্ডল। মামলায় দু’জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আব্দুল বারিক এবং তার সহযোগী ব্যবসায়ী মো.কবির হোসেন। এর আগে গত বছরের ২৫ এপ্রিল এন ইসলামের বিরুদ্ধে ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য এনে ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দু’টি মামলায় মোট ২ কোটি ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৫ টাকা পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। মূল আসামির সঙ্গে তাদের সহযোগীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করেছেন। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারে তারাও জড়িত।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট পাঁচজন আসামি আছে। আমরা মামলা গ্রহণ করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’