আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগী ১৯ বছরের চেয়েও বেশি!
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৫৮
ঢাকা: গেল আগস্ট মাসে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। শুধু তাই নয় এই সংখ্যা ২০০০ থেকে ২০১৮— এই ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর চেয়েও দুই হাজার ৪৮৮ জন বেশি।
ওই ১৯ বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ১৪৮ জন। সেখানে কেবল আগস্ট মাসেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৬৩৬ জন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ৩১ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯০২ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সে হিসাবেই আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে ৫২ হাজার।
আরও পড়ুন- সেপ্টেম্বর মানেই ডেঙ্গু আতঙ্ক!
কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই মারা গেছেন ২২ জন। এ বছরের ১৮৫টি মৃত্যুর ঘটনা থেকে ৯৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে এই ৫৭ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন। জুন থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। ওই মাসে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক হাজার ৮৮৪ জন ভর্তি হন। জুলাইয়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ হাজার ২৫৩ জন। আর আগস্ট মাস তো আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই সাত মাসে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছে, এক আগস্টেই সেই সংখ্যা ছিল এর প্রায় তিন গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমতির দিকে হলেও এতে স্বস্তি পাওয়ার সময় এখনো আসেনি। আমরা ৩৬৫ দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। এটা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।’
ডা. তাহমিনা আরও বলেন, ঢাকার বাইরে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। ঢাকার বাইরেও ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং চলছে।
গত চার বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ বছরেও তেমন ঘটতে পারে কি না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিসি পরিচালক বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী যে পরিমাণ বেড়েছিল, এবার তা হবে— এটা আসলে বলা যায় না। তবে আমার ধারণা আগস্টের তুলনায় সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা কমে যাবে। তবে তার জন্য ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজ করে যেতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে এডিস মশা নিধনে নেওয়া কার্যক্রমগুলোও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭১ হাজার ৯৭ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ৬৬ হাজার ৬৫৮ জন। অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এখন পর্যন্ত। এছাড়া বর্তমানে ৪ হাজার ২৫৪ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪০৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৪৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ১০৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮ জন ও খুলনা বিভাগে ১৩৩ জন, রংপুর বিভাগে ১৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৩ জন, সিলেট বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।