Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উৎকোচ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি করেন না তিনি!


২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:০৫

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের বিরুদ্ধে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য উৎকোচ বা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যোগদানের পর থেকেই তিনি দলিলপ্রতি দেড় হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

নিরুপায় জনগণ ও দলিল লেখকরা জিম্মি তার কাছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছে কয়েক দফা। কিন্তু তিনি অদৃশ্য ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বিঘ্নে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সুব্রত কুমার।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. সোহেল রানা তার ফেসবুক আইডি থেকে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হতে থাকে। পাশাপাশি চলতে থাকে তুমুল সমালোচনা।

সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস নিজেই একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে দেড় হাজার টাকা নিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি দলিলের উৎকোচ বাবদ আনিসকে প্রথমে তিন হাজার টাকা দিলে আনিস ওই দলিল লেখককে বলেন, ‘স্যার তিন হাজার ৫০০ টাকা দিতে বলেছেন।’

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমি নিজে সুব্রত কুমারকে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য কয়েক দফা উৎকোচ দিয়েছি। পরে ভিডিওটি প্রকাশ করায় আমাকে সে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমি জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা গ্রামের মো. মানিক বলেন, ‘আমি একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলে প্রথম দিন আমাকে নানা অজুহাতে দেখিয়ে পরে আসতে বলেন। আমি পরবর্তী সময়ে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ দিলে সে আমার দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন।’

২৭ আগস্ট শাহজাদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দলিলপ্রতি কমপক্ষে দেড় হাজার করে টাকা দিতে হয়। না দিলে নানা সমস্যা সৃষ্টি করেন। আর সাব-রেজিস্ট্রারের পক্ষে এই টাকা নেন সুমন নামে একজন নকলনবিশ।

এ ব্যাপারে সুমনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে আপনারা কথা বলেন।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সুব্রত কুমার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সেখানকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সেখানে সরকারি ফি ব্যতীত প্রতিটি দলিলের জন্য সর্বনিম্ন উৎকোচ নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্টার সুব্রত কুমার দাস বলেন, ‘আমি বা আমার অফিসে কোনো প্রকার ঘুষ নেওয়া হয় না। যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে সেখানে আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’

‘সুব্রত কুমারের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা?’- এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্টার আবুল কালাম মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহজাদপুরের সাব-রেজিস্টার সুব্রত কুমার দাসের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তা আমার নজরে আসে। আমি গত বুধবার থেকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ভাইরাল হওয়া যেসব ভিডিও ও ছবি হাতে এসেছে তার কিছু অংশের সত্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দেওয়া হবে।’

উৎকোচ সাব রেজিস্ট্রার সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর