ডাকাতি করতে ঢুকে ২ নারীকে ধর্ষণ: ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেড় বছর আগে দেশজুড়ে তোলপাড় তোলা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় এক বাড়িতে ‘চার নারী ধর্ষণের’ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে তদন্তে দুই নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। ৬ জন পেশাদার ডাকাত ওই বাড়িতে প্রবেশ করে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন।
পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর ছিল। যথেষ্ঠ সতর্কতার সঙ্গে আমাদের তদন্ত করতে হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে ৬ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে তাদের আসামি করা হয়েছে। তারা একেকজন পেশাদার ডাকাত। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। তারা বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে চুরি-ডাকাতি করে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় যে বাড়িতে তারা ঢুকেছিল সেখানেও তাদের উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি করা। কিন্তু ডাকাতির পাশাপাশি তারা ধর্ষণের মতো অপকর্মও করে বসে।’
‘ঘটনার পর চার নারী ধর্ষিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। কিন্তু আমরা তদন্তে পেয়েছি, চারজন নারীর মধ্যে তারা একজনকে গণধর্ষণ করেছিল এবং আরেকজনকে একজন ধর্ষণ করে। চার নারী পৃথকভাবে জবানবন্দিও দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে দুইজনকে ডাকাতি এবং তিনজনকে ধর্ষণের অভিযোগে ও একজনকে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগত্রভুক্ত করা হয়েছে।’
সন্তোষ জানান, অভিযোগপত্রভুক্ত ৬ আসামির মধ্যে ৫ জন হাজতে আছে। একজন পলাতক। এছাড়া ঘটনার পর কর্ণফুলী থানা পুলিশ এই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল। ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ না হওয়ায় তিনজনকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
৬ আসামি হলেন আবু সামা, মিজান মাতুব্বর, জহিরুল ইসলাম হাওলাদার ও তার বড় ভাই মইদুল ইসলাম হাওলাদার, ইলিয়াছ এবং মো. আব্দুল হান্নান ওরফে হান্নান মেম্বার। এদের মধ্যে ইলিয়াছ এখনও পলাতক আছে।
ঘটনার পর কর্ণফুলী থানা পুলিশ আবু, ফারুকী ও বাপ্পী নামে তিনজনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছিল, যারা পিবিআইয়ের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ঢুকে একদল দুর্বৃত্ত ‘চার নারীকে ধর্ষণ’ করে বলে অভিযোগ ওঠে। গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় ওঠে। ধর্ষণের শিকার নারীরা ঘটনার পরদিন মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পাঁচদিন পর মামলা নেয় পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।
কর্ণফুলী থানা পুলিশের এই বিতর্কিত ভূমিকার মধ্যেই পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে। দায়িত্ব পাবার দিনই মিজান মাতুব্বরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পিবিআই। এরপর ওই রাতেই আবু সামাকে গ্রেফতার করা হয়।
মূলত এই দুজনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেই খুলে যায় ঘটনার জট। একে একে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ হয়। পরে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জবানবন্দিতে উঠে আসে, পেশাদার মোবাইল চোর আবু সামার পরিকল্পনায় ডাকাতি করতে গিয়েছিল তারা। সামা ও জহিরুল বাইরে ছিল। মইদুলসহ বাকি চারজন ভেতরে গিয়েছিল। মইদুল, ইলিয়াছ ও মিজান ধর্ষণে জড়িত ছিল। জহিরুল বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করেছে। আর আবু সামা ও হান্নান ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিল।