Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতিতে সাদ এরশাদ, লড়বেন বাবার আসনে


২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৩৬

ঢাকা: গুঞ্জন ছিল, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসন রংপুর-৩-এ উপনির্বাচন করবেন তার বড় ছেলে রহগীর আল মাহি সাদ ওরফে সাদ এরশাদ। সেই গুঞ্জনই সত্য হতে চলেছে। সাদ নিজেই সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বাবার আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন তিনি। জনগণের খেদমত আর বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্যই তিনি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন বলেও জানান।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে সাদ এরশাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে লড়াই করতে দল থেকে ফরম সংগ্রহ করব। আশা করি, রংপুরবাসী আমাকেই এই নির্বাচনে জয় উপহার দেবে।

আরও পড়ুন- রংপুর-৩ আসনে ‘প্রার্থী হচ্ছেন’ শাদ এরশাদ

সাদ এরশাদ বলেন, আমি রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশ করলাম জনগণের খেদমত করার জন্য। আমি বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করব। আমার বাবা সোনার বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেতেন। বাবার সেই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে যা যা করণীয়, তা আমি করব।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে, নতুন বাংলাদেশ গড়তে, সোনার বাংলাদেশ গড়তে অনেক কিছুরই প্রয়োজন। শিক্ষার হার বাড়াতে হবে, বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এই দুইটি বিষয়, অর্থাৎ শিক্ষার হার বাড়ানো ও কর্মসংস্থান তৈরিতে আমার বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে।

রংপুর নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সাদ বলেন, বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুরকে অত্যাধুনিক শহরে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা রয়েছে আমার। রংপুরের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, কর্মসংস্থানের খাত নেই। এসব অভাব পূরণ করে রংপুরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

আরও পড়ুন- এরশাদের আসনে উপনির্বাচন ৫ অক্টোবর

সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এরশাদপুত্র বলেন, বাবা ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন। তারপর রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন। বরাবরই বাবাকে দেখেছি মানুষকে সাহায্য করতে। সেসব থেকেই আমারও রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। এর একটি আলাদা অনুভূতি তো রয়েছেই। সেটা অবশ্যই ভালো লাগার অনুভূতি।

বিজ্ঞাপন

কেবল ব্যক্তিগত সেই অনুভূতিই নয়, নিজের শিক্ষাকে দেশের জন্য কাজে লাগাতেই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া— বলেন সাদ। তার কথায়, আমি যা শিক্ষা গ্রহণ করেছি, সেটা যদি কাজে লাগাতে না পারি, সেই শিক্ষা যদি দেশের কল্যাণে কাজে না লাগে, সেই শিক্ষা দিয়ে কী লাভ? সে কারণেই জনগণের জন্য, দেশের জন্য রাজনীতি করব।

বাবা এরশাদই রাজনীতিতে যুক্ত হতে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান সাদ। তিনি বলেন, বাবার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখেছি। বন্যার সময় যেভাবে হাঁটু পানিতে নেমে মানুষের কাছে যেতেন, ত্রাণ বিতরণ করতেন— সেসব কার্যক্রম দেখেছি। জনগণের জন্য তাকে আরও অনেক কিছু করতে দেখেছি। সেসব দেখেই মনের ভেতরে একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছে, কখনো রাজনীতিবিদ হলে বাবার মতোই কাজ করব। সেই সময়টিই এখন এসেছে।

দলের পদ-পদবী বিষয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘রাজনীতিতে যখন এসেছি, দলের ভেতরে পদ অবশ্যই থাকবে। আমাদের দলের প্রতিটি নেতাকর্মীই আমাকে সহায়তা করবেন বলে আমি আশা করি।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদকে রাজনীতিবিদ হিসেবে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন— জানতে চাইলে সাদ বলেন, যে তিন জনের কথা বলেছেন, তিন জনই আমার কাছে বাবার মতো। আমি জাতির জনককে দেখিনি, জিয়াউর রহমানকেও দেখিনি। তবে বাবাকে দেখেছি। তারা প্রত্যেকেই আমার কাছে সম্মানিত ব্যক্তি, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাদের মূল্যায়ন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা। এই মানুষটির জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। জাতির জনকের জন্ম হয়েছে বলেই আমরা একটি ভূখণ্ড, একটি পতাকা পেয়েছি। তিনি আমাদের সার্বভৌমত্ব এনে দিয়েছেন। তিনি দেশ দিয়ে গেছেন, সেই দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের।

জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল রয়েছে— এমন গুঞ্জন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাদ এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে কোন্দল আছে বলে মনে করি না। জাতীয় পার্টি আসলে একটি পরিবার। বড় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খানিকটা মনোমালিন্য থেকেই থাকে। তেমনি জাতীয় পার্টি পরিবারের মধ্যেও টুকটাক কিছু যদি থাকে, সেগুলোও মীমাংসাযোগ্য।

বার্ধক্যজনিত কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ১৪ জুলাই সকালে মারা যান। ওই দিনই তার রংপুর-৩ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আসন শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজন করতে হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, আগামী ৫ অক্টোবর ওই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১১ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর।

এদিকে, এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই তার আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এর মধ্যে এরশাদের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদও জানান, বাবার আসনে লড়তে আগ্রহী সাদ। তাকে ঘিরে দলেও গুঞ্জন ছিল। সেই গুঞ্জনই সত্য প্রমাণিত হলো।

জাতীয় পার্টি রংপুর-৩ উপনির্বাচন সাদ এরশাদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর