সরকার দলীয় নেতার পরিবহন ধর্মঘটে জনভোগান্তি
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি দলের নেতার ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রামসহ ১৪ জেলায় গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যান চলাচল করছে না। এতে ধর্মঘটের আওতায় থাকা জেলাগুলোর সঙ্গে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ রুট ও দূরপাল্লার রুটের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পণ্য নিয়ে কোনো পরিবহন চট্টগ্রামের বাইরে যাচ্ছে না এবং চট্টগ্রামে আসতেও পারছে না।
বিআরটিএ ও পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ নয় দফা দাবিতে ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ নামে একটি সংগঠনের’ ডাকে রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘট চলছে। সংগঠনটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।
ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আমরা নয় দফা দাবি মানতে তিনদিন সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তিনদিনের মধ্যে প্রশাসনের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এজন্য আমরা ধর্মঘট করছি। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াসহ ১৪ জেলায় একযোগে গণ ও পণ্যপরিবহন বন্ধ আছে।’
৯ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কাগজপত্র হালনাগাদে বিআরটিএর কার্যক্রমে ভোগান্তির নিরসন, টোকেন বাণিজ্য বন্ধ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্থাপিত ওয়েট স্কেল দুটির পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে প্রদান এবং তল্লাশির নামে হয়রানি বন্ধ করা।
রোববার ভোরে ধর্মঘট শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম নগরী থেকে উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে না। পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল সীমিতভাবে করলেও চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে যাচ্ছে না। নগরীতেও বাস চলাচল করছে না। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন ও ছোট যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
সকালে নগরীর শাহ আমানত সেতু, অক্সিজেন মোড়, অলঙ্কার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থেকে দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাঁশখালীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। ভেবেছিলাম ধর্মঘট ডাকলেও অভ্যন্তরীণ বাসগুলো চলবে। কিন্তু বাস পাইনি। এখন কয়েকজন মিলে মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাচ্ছি।’
নগরীর দামপাড়া এলাকায় দূরপাল্লার সৌদিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালিক কর্তৃপক্ষ টিকেট বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। এখন আমরা টিকেট বিক্রি করছি না। সকালের আগে বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এখন কোনো বাস ছাড়ছে না।’
সংগঠনটি ৯ দফা দাবি তুললে ধর্মঘট আহ্বানের নেপথ্যে ভিন্ন কারণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের একাংশ আলাদা হয়ে ভিন্ন সংগঠন তৈরি হয়েছে। মঞ্জু গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ গড়ে তুললে একই নামে পাল্টা সংগঠনও দাঁড়িয়ে গেছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিজেদের শক্তি জানান দিতে মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন অংশটি আকস্মিকভাবে ৯ দফা দাবি তুলে এই ধর্মঘট আহ্বান করেছে।
জানতে চাইলে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় যারা গাড়ি পুড়িয়ে নাশকতা করেছিল, যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ড্রাইভারকে দিয়ে প্রশাসন আমাদের মুখোমুখি একটি গ্রুপ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রশাসন তাদের খাতিরযত্ন করে। আমরা এটা বরদাশত করতে পারি না। সেজন্য ধর্মঘট ডেকেছি। এছাড়া আমাদের দাবিগুলোও যৌক্তিক।’
মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশও একসময় তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেসময় অনুসারী ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর।
সরকারী দলের নেতা হয়ে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। প্রশাসনকে আমরা চিঠি দিয়েছি, আলটিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের পাত্তাই দিচ্ছে না। তারা আছে নাশকতাকারীদের নিয়ে। আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। সেজন্য মেয়র মহোদয় (আ জ ম নাছির উদ্দিন) আমাদের বৈঠকে বসতে বলেছেন। আমরা অবশ্যই বৈঠকে বসব।’
দুইবছর আগে ‘মদ্যপ’ অবস্থায় এক যুবলীগ নেতার পায়ে গুলি করে আলোচনায় এসেছিলেন মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবে ঝগড়ার জেরে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদিনকে গুলি করার পর মঞ্জুকে আটক করেছিল পুলিশ। আহত জয়নালের ভাই বাদি হয়ে থানায় মামলার এজাহার জমা দিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার হস্তক্ষেপে পরে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২১ ঘন্টা পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় মঞ্জুকে।