কাশ্মিরে অনিরাপদ স্কুল, ক্লাস লেকচার বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৪৮
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে কাশ্মিরে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা, চলছে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান। এছাড়া উগ্রপন্থিদের সাথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘাতের আশঙ্কায় বাবা-মারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না। তাই কাশ্মিরের স্কুলগুলো কার্যত শিক্ষার্থীশুণ্য অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠাভ্যাস যেন নষ্ট না হয়, সে কথা মাথায় রেখে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে কাশ্মিরের স্কুলগুলো। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কাশ্মির উপত্যকার সবগুলো স্কুল একযোগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট এবং ক্লাস লেকচার যেন তারা স্কুল থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। যেগুলো অনুসরন করে ইন্টারনেটবিহীন কাশ্মিরে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠাভ্যাস চালু রাখতে পারবে। খবর হিন্দুস্থান টাইমসের।
হুমহামার একটি বেসরকারি স্কুল থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক নোটিশে বলা হয়, এখন পর্যন্ত যে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্য ক্লাস লেকচার এবং অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করতে পারেন নি তারা যেন আগামী সোমবারের (১৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যে সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
এদিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাসাইনমেন্ট এবং ক্লাস লেকচারগুলো হার্ড কপির পাশাপাশি সফট কপিতেও দিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলো মোবাইল বা কম্পিউটারেও অনায়াসে পড়তে পারবে। হাভালের পুরাতন শহরের একটি স্কুলের বিজ্ঞাপন থেকে অভিভাবকদের ১৬ জিবির পেনড্রাইভ সাথে আনার জন্য জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য উপাদান তৈরী করার জন্য অনেক স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষকদেরকে স্কুলে উপস্থিত হবার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি স্কুলের একজন প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন, এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে তারা তো কোন অভিভাবককে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে জোর করতে পারেন না তাই তারা বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
অনেক স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের স্কুল বাসের ড্রাইভারদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হচ্ছে, যেন তারা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট এবং ক্লাস লেকচার পৌছে দিতে পারে।
রোকসানা নামের একজন স্কুল শিক্ষক হিন্দুস্থান টাইমসকে জানিয়েছেন, যেহেতু অধিকাংশ অভিভাবকই ততটা শিক্ষিত নন যে তারা পত্রিকা পড়ে অ্যাসাইনমেন্টগুলো স্কুল থেকে সংগ্রহ করবেন। তাই বাড়িবাড়ি পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিলাল আহমেদ নামের একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, স্কুলগুলোর এ ধরনের উদ্যোগ বাচ্চাদের মনস্তত্ত্বে খুব ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তারা আবার ঐ অ্যাসাইনমেন্ট লেখার মাধ্যমে পড়াশুনায় ফিরে আসছে।
উল্লেখ করা যায় যে, আগস্টের ১৯ তারিখ থেকে রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অভিভাবকেরা সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। স্কুলে শিক্ষক এবং কর্মচারী ছাড়া আর কেউ উপস্থিত থাকেন না। কাশ্মিরের স্কুলগুলো কার্যত মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। শুধু স্কুলগুলোই নয়, শিক্ষার্থী শূন্যতায় কোচিং সেন্টারগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে।
এর আগে, কাশ্মিরে ২০১৪ সালের বন্যা এবং ২০১৬ সালের অচলাবস্থার পর স্কুল অনেকদিন বন্ধ থাকায় সব শিক্ষার্থীকে গণ প্রমোশন দিতে হয়েছিল। এবার ও সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
৩৭০ ধারা অ্যাসাইনমেন্ট কাশ্মির ক্লাস লেকচার শিক্ষার্থী শূণ্য স্কুল বন্ধ